অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জাল করা শিক্ষককে স্থায়ী বরখাস্তের সুপারিশ

নওগাঁ প্রতিনিধি |

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পাইকড়া বড়াইকুড়ি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. আকরাম আলী মৃধাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের সুপারিশ করেছে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আপিল ও আরবিট্রেশন কমিটি। অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জাল করায় এ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এছাড়া বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী আন্দোলন ও শিক্ষাথীদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সরকার বিরোধী আন্দোলন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের সুপারিশ করেছে আপিল এন্ড আরবিট্রেশন বোর্ড সভা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. গোলাম কিবরিয়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বরখাস্তকৃত প্রভাষক মো. আকরাম আলী মৃধা চাকরির শুরু থেকেই চাকরিবিধির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছে মত চলছে। বিভিন্ন সময় তিনি আমার স্বাক্ষর জাল করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে তাকে শোকজ করা হয়েছিল এবং সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সর্বশেষে তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের আবেদন করা হলে আপিল এন্ড আরবিট্রেশন কমিটি তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের সুপারিশ করেছে।

যদিও তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়নি বলে দাবি করেছেন শিক্ষক আকরাম আলী মৃধা। তিনি দাবি করেছেন, এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। 

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার পর বেতন ভাতার জন্য ব্যাংকে হিসাবনম্বর খোলার সময় অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জাল করেন সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক আকরাম আলী মৃধা। এরপর তিনি নিজের খেয়ালখুশি মত চলতে থাকেন। প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সরকার বিরোধী আন্দোলন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সে বছরের ২৩ মার্চ গভর্নিং বডির সভায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বরখাস্তকৃত শিক্ষক আকরাম আলী মৃধা বেতন ভাতার পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কারণ জানতে চান। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ আদালতে প্রমাণাদি দাখিল করেন। সে মামলার শুনানিতে শিক্ষক আকরাম আলী মৃধা স্বীকার করেন তিনি সরকার বিরোধী আন্দোলন ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন। পরবর্তীতে তাকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মে তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করার অনুমতি চেয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড বরাবর আবেদন করেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

গতকাল বুধবার তাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করার সুপারিশ করে কলেজ কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান। অধ্যক্ষকে পাঠানো চিঠির একটি কপি দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে এসেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ১৩তম আপিল এন্ড আরবিট্রেশন কমিটির সভায় প্রভাষক আকরাম আলী মৃধাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করার আবেদনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেদিনের সভায় কমিটি প্রভাষক আকরাম আলী মৃধাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করার আবেদন মঞ্জুর করার সুপারিশ করে ও বিষয়টি বোর্ড সভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে গত ২৮ জুলাই ২৪৭তম বোর্ড সভায় আপিল অরবিট্রেশন কমিটির সুপারিশ অনুমোদিত হয়। তাই চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করার অনুমোদিত সুপারিশ বাস্তাবয়ন করতে চিঠিতে বলা হয়েছে অধ্যক্ষকে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি বরুন কুমার সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বোর্ডের সিদ্ধান্তের চিঠি আমরা হাতে পেয়েছি। সেই চিঠির আলোকে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রভাষক মো. আকরাম আলী মৃধা দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, ‘এই নিউজে আপনার কি স্বার্থ আছে? আর এসব বিষয়ে আপনার কি স্বার্থ আছে?’ 

তিনি দাবি করেন, ‘আমাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়নি। সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। আপনি যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো কিছু লেখেন তাহলে আপনাকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026600360870361