অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জন্মদিন আজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের আজ জন্মদিন ।

আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম এ টি এম মোয়াজ্জেম। তিনি ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। মা সৈয়দা খাতুন গৃহিণী হলেও লেখালেখির অভ্যাস ছিলো। পিতামহ শেখ আবদুর রহিম ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক। আনিসুজ্জামানরা ছিলেন পাঁচ ভাই-বোন। তিন বোনের ছোট আনিসুজ্জামান, তারপর আরেকটি ভাই। বড় বোনও নিয়মিত কবিতা লিখতেন। 

আনিসুজ্জামান কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এখানে তৃতীয় শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বাংলাদেশে চলে আসেন এবং খুলনা জেলা স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এক বছর পর পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন এবং প্রিয়নাথ হাইস্কুলে (বর্তমান নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) ভর্তি হন।

১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে এ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে একই বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সে সময় বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও শিক্ষক ছিলেন মুনীর চৌধুরী।

১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলা একাডেমির গবেষণা বৃত্তি লাভ করেন। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজ আমলের বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারায় ১৭৫৭-১৯১৮ বিষয়ে পিএইচডি শুরু করেন। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের গবেষণা বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস: ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল বিষয়ে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন।

আনিসুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের জুনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের রিডার হিসেবে যোগদান করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করেন এবং পরবর্তীকালে ভারত গমন করে শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধকালীন গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগ দেন।

১৯৭৪ - ৭৫ খ্রিষ্টাব্দে কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমি স্টাফ ফেলো হিসেবে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে গবেষণা করেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পে অংশ নেন।

১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে আবার যুক্ত হন। তিনি মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ (কলকাতা), প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। এছাড়াও তিনি নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আনিসুজ্জামান শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলা একাডেমি থেকে প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। শিক্ষায় অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদক প্রদান করা হয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে তাকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া তিনি ১৯৯৩ ও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে দুইবার আনন্দবাজার পত্রিকা কর্তৃক প্রদত্ত আনন্দ পুরস্কার, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট. ডিগ্রি এবং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ হিসেবে নিয়োগ দেয়।

তিনি শিল্পকলাবিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা যামিনী এবং বাংলা মাসিকপত্র কালি ও কলম-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
আনিসুজ্জামান ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052940845489502