অনাথ স্কুল এখন ভুতেরবাড়ি!

দৈনিক শিক্ষাডটকম, খাগড়াছড়ি |

খাগড়াছড়ির রামগড়ের তৈছালাপাড়া এলাকায় অবস্থিত এতিম-অনাথদের জন্য সরকারের টাকায় নির্মিত একটি পরিত্যক্ত আবাসিক স্কুল। স্থানীয় এতিম ও অনাথ বালক বালিকাদের ফ্রি লেখাপড়ার সুযোগ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এ আবাসিক স্কুলটি।

চারদিকে বন-জঙ্গল। দালান-কোটাগুলো গাছ-গাছালি, লতা-পাতায় ঢেকে গেছে। আধা পাকা ঘরগুলোর টিনের ছাউনি নেই। নেই দরজা-জানালা। ছাদ করা বিশালায়তনের দুটি ভবনেরও একই হাল। কাঠের দরজা, জানালা ঘুণে খেয়ে ভেঙ্গে গেছে। ভবনের ভিতরের বিভিন্ন কক্ষে সাজিয়ে রাখা স্কুল বেঞ্চ, হোস্টেল কক্ষে পড়ার বক্স টেবিল ও চেয়ার, ষ্টীলের তৈরি দোতলা খাট ইত্যাদি আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। মাকড়শা আর নানান পোকা-মাকড় বাসা বেঁধেছে প্রতিটি কক্ষ। দেয়ালগুলো লতায় ঢাকা। পলেস্তার খসে পড়ছে। দিনের বেলায়ও অন্ধকার পরিবেশ।

ক্লাশ রুম, বেঞ্চ ব্লাকবোর্ড ছাড়াও বালক ও বালিকাদের জন্য আলাদা আলাদা দুইটি বিশাল সুদৃশ্য হোস্টেল ভবন, যেখানে রয়েছে ৫টি করে হল রুম, একটি ডাইনিং রুম, অফিস রুম, কেয়ারটেকার রুম ও আধুনিক মানের ওয়াশ রুম। হোস্টেল রুমে  স্টিলের তৈরি দোতলা খাট, লেপ, তোষক, বেড সীট, বালিশ, মশারি, রিডিং বক্স টেবিল, চেয়ার। ডাইনিং রুমের যাবতীয় ফার্নিচার, ক্রোকারিজ সামগ্রী, কিচেনের হাঁড়ি পাতিল প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রই কেনা হয়। 

প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষক, সহকারি শিক্ষক ও কর্মচারীর জন্য পৃথক পৃথক ডরমেটরিও নির্মাণ করা হয়। স্থাপন করা হয় বৈদ্যুতিক ও পানি সাপ্লাই ব্যবস্থা। প্রায় ১২ একরের জায়গায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি পাকা সীমানা প্রাচীরে সংরক্ষিত। 
 
২০০৫-০৬ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি সরকারের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ির এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়া রামগড়ের এতিম-অনাথ বালক বালিকাদের জন্য আবাসিক স্কুলটি প্রকল্পভূক্ত করেন। ঐসময় রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ও বান্দরবনের রুমায়ও একই প্রকল্প নেওয়া হয়। তিনটি স্কুলের জন্য ৫ কোটি টাকা করে মোট ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ঠিকাদারের মাধ্যমে তিনটি স্কুলের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য সব প্রস্ততি সম্পন্ন করার পর রাজস্থলি ও রুমায় স্কুল দুটি চালু হলেও রামগড়ের স্কুলটি চালু করা হয়নি। 

জানা যায়, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে রামগড়ের স্কুলের জন্য মাস্টারোলে ৪ জন গার্ড, ২জন টেবিলবয়, ২ জন আয়া, পিয়ন ও একজন ঝাড়ুদার নিয়োগ এবং ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ৬০ জন এতিম, অনাথ বালক ও  ৬০ জন বালিকা ভর্তির প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা হয়েছিল।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় রামগড়ের স্কুলটি চালু করা যায়নি। 

এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক  চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ির সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুঁইয়া বলেন, ‘পার্বত্য এলাকার পাহাড়ি-বাঙ্গালি এতিম-অনাথ শিশুদের বিনামূল্যে  শিক্ষার সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে  রামগড়ে এতিম-অনাথ বালক বালিকার আবাসিক স্কুলটি স্থাপন করা হয় আমার উদ্যোগে। অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষক নিয়োগ এমনকি ছাত্রছাত্রী ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও বিএনপি সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামী সরকার এসে স্কুলটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে সরকারের অনেক অর্থ অপচয় হয়। 

তিনি আরো বলেন, ‘রাঙ্গামাটি ও বান্দরবনে  এ ধরনের তিনটি আবাসিক স্কুল চালু আছে, যা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার হাতে গড়া। তবে ঐ স্কুলগুলো শুধুমাত্র উপজাতীয়দের জন্য সংরক্ষিত। রামগড়ে আমি স্থাপন করেছিলাম পাহাড়ি-বাঙ্গালি সকল সম্প্রদায়ের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য। এটা একটি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে বিগত সরকারর সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

রামগড়ের দায়িত্বে থাকা উপসহকারি প্রকৌশলী তাফাজ্জল হক বলেন, ‘পরিত্যক্ত স্কুলটির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেকবার অবহিত করা হয়েছে।’ 

রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতা আফরিন বলেন, ‘সরকারের এতগুলো টাকায় প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের পর কেন চালু হল না এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবো এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।’ 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034360885620117