অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

মো. তাজরুল ইসলাম, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

শিক্ষক শুধুই শিক্ষক নন তিনি একজন দক্ষ প্রশিক্ষকও বটে৷ জীবনের সমস্ত ধ্যান জ্ঞান সাধনা উজাড় করে একজন শিক্ষক একটা জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে৷ প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষায় সমস্ত শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য৷ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্সসহ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে দুচোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে যোগ দেয়া অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের আজ একি দৈন্যদশা! প্রায় ৩০ বছর  বেতন-ভাতা বঞ্চিত৷ প্রতিষ্ঠান থেকে নাম মাত্র কিছু দেয়া হলেও বর্তমানের দ্রব্যমূল্যের বাজারে ৪/৫ জন সদস্যের পরিবার নিয়ে দিশেহারা৷ এ যেনো জীবন যুদ্ধে  মাঝ সাগরে হাবুডুবু খাওয়া৷ 

যেখানে সারা দেশ বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থায় অঙ্গীকারবদ্ধ সেখানে কটা মাত্র অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক৷ যারা উচ্চ শিক্ষায় দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন৷ তারা কেনো বেতনের জন্য এত হাহাকার করবে৷ শিক্ষা এবং শিক্ষকই যদি জাতিকে আলোর পথ দেখায় তাহলে শিক্ষকদের অভুক্ত রেখে জাতি আলোকিত স্মার্ট হয় কি করে!

ছোটবেলায় স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম ক্লাসে শিক্ষক জিজ্ঞেস করতো বড় হয়ে কি হবে? অনেক শিশুদের বক্তব্য ছিলো বড় হয়ে শিক্ষক হবো, জাতিকে আলোকিত করবো৷ সেই শিশুটিই আজ শিক্ষক হয়েছে, অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক৷ বিনাবেতনের শিক্ষক৷ সেদিনের শিশুটি  যদি জানতো শিক্ষকদের এই দৈন্য দশার কথা তাহলে হয়তো শিক্ষক হতে কখনও স্বপ্ন দেখতো না৷

যাদের বেতনের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ভাতের থালা হাতে বসতে হয়৷ আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়৷ দিনের পর দিন অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয় তারা কি করে শিক্ষায় গবেষণা করে একজন দক্ষ শিক্ষক ও প্রশিক্ষক হবে? শিক্ষকদের মৌলিক চাহিদার নিরাপত্তা থাকতে হবে। তবেই একজন শিক্ষক হবেন দক্ষ প্রশিক্ষক৷ 

পরিবারে শুধুই হতাশা, লজ্জা আর অবজ্ঞার ঘানি টানতে টানতে আজ অনেকটা ক্লান্ত৷ তবুও থেমে যায়নি৷ পরিবার, সন্তানের কথা চিন্তা করে এখনো নিভুনিভু প্রদীপের মতো টিকে আছে সমাজ সংসারে৷ 

যখনি বেতনের বিষয়ে কোনো কথা বা আন্দোলন, মানববন্ধন হলে খুব কষ্ট করে ছুটে যান ঢাকায়৷ হয়তো এবার কিছু একটা হবে৷ ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি ফুটবে৷ 

কিন্তু- যে শিশুটি গত ক’দিন বাবা-মার আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছে, অপেক্ষা করছে কিছু একটা নিয়ে মা-বাবার ফিরে আসার, সে শিশু কি শূন্য হাতে ফেরা ক্ষুধার্ত বাবার দীর্ঘশ্বাসের ভারী যন্ত্রণার কথা বুঝবে। সেকি মা কিংবা বাবার চাকরির অনিশ্চিত গন্তব্যের কথা বুঝে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হবে? কিংবা যে তরুণ ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে একটি নিশ্চিত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে পিতা তার জীবনের সঞ্চয়ের সবটুকু খরচ করে ছেলেকে মানুষ করেছে, সে পিতা কি এবার  আন্দোলন থেকে শূন্য হাতে ফেরা ছেলের মুখ দেখে কোনো অনিশ্চিত জীবনের পদধ্বনি শুনবে? এসব কিছুই আমরা জানি না, হয়তো জানতে চাইও না।

লেখক: অধ্যক্ষ, কেশরহাট মহিলা কলেজ মোহনপুর, রাজশাহী

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নির্বাচন নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ নজরুল - dainik shiksha নির্বাচন নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ নজরুল ছাত্র আন্দোলন দমনে ব্যবহার হয়েছে স্নাইপার রাইফেল - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলন দমনে ব্যবহার হয়েছে স্নাইপার রাইফেল ছয় দাবি মেডিক্যাল টেকনোলজি ও ফার্মেসি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ছয় দাবি মেডিক্যাল টেকনোলজি ও ফার্মেসি শিক্ষার্থীদের কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিসিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা - dainik shiksha দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিসিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বৈষম্য নিরসনে একগুচ্ছ সুপারিশ সরকারিকৃত শিক্ষকদের - dainik shiksha বৈষম্য নিরসনে একগুচ্ছ সুপারিশ সরকারিকৃত শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে সহায়ক - dainik shiksha ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে সহায়ক ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম - dainik shiksha ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024509429931641