অনার্সে এক বিষয়ে ফেল ও দ্বিতীয় শ্রেণি, তবুও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক!

রাবি প্রতিনিধি |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান গত ৬ মে যে ১১ জন শিক্ষককে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন, তাদের অনেকেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার মতো নূন্যতম যোগ্যতা নেই। সেই ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকৌশল অনুষদভুক্ত ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ পেয়েছেন ইন্দ্রনীল মিশ্র নামের একজন প্রার্থী। সম্প্রতি সেই প্রার্থীর অনার্স পরীক্ষার ফলাফল গণমাধ্যমের কাছে এসেছে।

ফলাফলে দেখা যায়, ইন্দ্রনীল মিশ্র অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি অর্জন করতে পারেননি। বরং দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে যে ১৪ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে, তার মধ্যে ইন্দ্রনীল মিশ্র মেধাক্রম অনুযায়ী রয়েছেন দশম স্থানে। শুধু তাই নয়, তিনি-ই একমাত্র ছাত্র যিনি অনার্স এর কোর্স-৪০৩ এ ফেল করেছিলেন।

এমন একজন ছাত্রকে বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করছেন স্বয়ং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এমদাদুল হক। তিনি বলেন, বিভাগে নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সার্কুলার ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষা না নিয়েই একজন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবার এমন একজনকে নিয়োগ দেয়া হল যে কোনোভাবেই শিক্ষক পদে কাম্য নয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছে। যদি এটা বাতিল হয়, তবে বিভাগের জন্য যেমন মঙ্গল হবে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় জন্যও মঙ্গল হবে।

ফলাফল শিটে দেখা যায়, ইন্দ্রনীল মিশ্রের বিএসসি (অনার্স) পরীক্ষার রোল নাম্বার ছিল: ০৬১১৫৬২২। তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ২০০৯ সালের বিএসসি (সম্মান) ফাইনাল পরীক্ষায় (২০১০ সালে সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত) দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ফলাফল খারাপ হওয়ায় এমএসসিতে থিসিস গ্রুপে যাওয়া-ই সুযোগ পাননি তিনি।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইন্দ্রনীল মিশ্রের পিতার নাম অধ্যাপক চিত্ত রঞ্জন মিশ্র। যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের একজন সিনিয়র অধ্যাপক। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানের সঙ্গে অধ্যাপক চিত্ত রঞ্জন মিশ্রের গভীর সখ্যতা ছিল। এছাড়াও ‘অবৈধভাবে’ শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়া ইন্দ্রনীল মিশ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স না পেলেও ‘ওয়ার্ড কোটায়’ ভর্তি হয়েছিলেন।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলছেন, যার বাবা বিশ্ববিদ্যালের একজন সিনিয়র প্রফেসর, মাসিক বেতন পান সবমিলিয়ে দেড় লাখের কাছাকাছি, তাকে বিদায়ী উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে মানবিক কারণে। এটা খুবই লজ্জাস্কর বিষয়।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, এমন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া বিস্ময়কর। এটা শিক্ষামন্ত্রণালয় দেখভাল করছে। তাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তীতে তাদেরকে যোগদান করতে দেবো কিনা সেটা জানাতে পারবো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.015866041183472