দেশে নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি টিকা জেনেভ্যাক-বি দিয়ে জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা প্রস্তুত ও এই টিকা নারীদের দেহে পুশ করার অভিযোগে রাজধানী থেকে সম্প্রতি ৫ জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড হিমেলকে গতকাল গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, প্রথমে চক্রটি প্রতিটি হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের টিকা ভারত থেকে অবৈধ পথে মাত্র ৩৫০ টাকা দিয়ে আনত। তারপর একটি টিকা দিয়ে ১০টি জরায়ু ক্যানসারের টিকা তৈরি করে প্রতিটি টিকা আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করত। পরে অধিক লাভের আশায় চক্রটি শুধু পানি ও কালার (রঙ) দিয়ে হেপাটাইটিস-বি টিকা তৈরি করে তা আড়াই হাজার টাকা করে বিক্রি করে আসছিল।
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার ও নকল টিকা উদ্ধারের পর নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত ১৯ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লেখা এক চিঠিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্কুল-কলেজে বেসরকারি পর্যায়ে কোনো ধরনের ভ্যাকসিনেশন করার জন্য বলা হলে এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অথবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া এ ধরনের ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি স্কুল-কলেজে না করার জন্যও অনুরোধ করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
নকল টিকা তৈরি ও তা বিক্রির অভিযোগে এর আগে সাইফুল ইসলাম শিপন, ফয়সাল আহম্মেদ, আল-আমিন, নুরুজ্জামান সাগর ও আতিকুল ইসলাম নামে ৫ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গতকাল চক্রটির মাস্টারমাইন্ড হিমেলকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তার জবানবন্দিতেই বেরিয়ে এসেছে প্রথমে একটি টিকার ভায়াল দিয়ে ১০টি তৈরি করা হতো। কিন্তু অধিক লাভের আশায় চক্রটি তাদের কেরানীগঞ্জের কারখানায় শুধু পানি ও কালার দিয়ে নকল টিকা তৈরি করে আসছিল। গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনের ডিসি মো. গোলাম সবুর বলেন, হিমেলকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই চক্রের পেছনে অন্য কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত আছে কিনা তা জানা যেতে পারে। তিনি বলেন, নকল এই টিকা জাতিসংঘের অনুমোদনপ্রাপ্ত বলে প্রচার করে তারা নারীদের কাছে বিক্রি করে আসছিল।
জানা গেছে, ‘অবৈধ পথে হেপাটাইসিস-বি টিকা আমদানি করত চক্রটি। পরে নিজস্ব মেশিনের মাধ্যমে একটি হেপাটাইসিস-বি ভাইরাসের টিকা দিয়ে ১০টি জরায়ু ক্যানসারের টিকা তৈরি করত। কয়েকটি দানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে দু’বছর ক্যাম্পেইন করে গাজীপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬ হাজার মেয়ের শরীরে এসব নকল টিকা পুশ করেছে চক্রটি।’
‘রাজধানীর দারুসসালামের ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন, দক্ষিণখানের আল নুর ফাউন্ডেশন, টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকার পপুলার ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের মাধ্যমে এসব নকল টিকার ক্যাম্পেইন ও বাজারজাত করত চক্রটি। গত ২ বছরে এসব প্রতিষ্ঠান গাজীপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন করে টিকা পুশ করেছে।
এই চক্রের সঙ্গে ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন, দক্ষিণখানের আল নুর ফাউন্ডেশন এবং টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকার পপুলার ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেফতার ৬ জনের মধ্যে সাইফুল ইসলাম শিপন এ আর খান ফাউন্ডেশনে ৭০ হাজার টাকা বেতনে মার্কেটিং বিভাগে চাকরি করতেন। একাধিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চক্রটি এই নকল টিকা সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।