অবন্তিকার আত্মহ*ত্যা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ

ইমরান ইমন |

সম্প্রতি ফাইরুজ অবন্তিকা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। আত্মহত্যার আগে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তার আত্মহত্যার জন্য দুইজন মানুষকে দায়ী করেছেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে ও আরেকজন তার ব্যাচমেট আম্মান সিদ্দিকীকে।

সে লেখায় অবন্তিকা উল্লেখ করেন, তার ব্যাচমেট আম্মান সিদ্দিকী তাকে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য করেছেন। আর প্রক্টর দ্বীন ইসলাম আম্মানের হয়ে তাকে বিভিন্ন সময়ে ডেকে নিয়ে এবং বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে তার ছাত্রত্ব খেয়ে ফেলার হুমকি দেন প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন দৃশ্য দেখারও বাকি ছিল! অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় প্রক্টর দ্বীন ইসলাম কী করে দায় এড়াবেন? যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মকাণ্ডে অবন্তিকা শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে দ্বীন ইসলাম যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন তা কি তিনি করতে পারেন? একটি সম্ভাবনাময় জীবনকে অপমৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলেন! এর জন্য কি শেষ পর্যন্ত তার কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে?

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে বড়ো একটা ‘ফাঁদ’, যেখানে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এসে নানামুখী যন্ত্রণা আর সহিংসতার শিকার হয়ে নিজেকে বলি দিতে হয়। অবন্তিকা যার জ্বলন্ত উদাহরণ। এ রকম হাজারো অবন্তিকার প্রতিনিয়ত অপমৃত্যু ঘটে এ ফাঁদে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন আর শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। শুধু শিক্ষার পরিবেশই নয়, ঠিকভাবে বেঁচে থাকারও পরিবেশ নেই। নানা অনিয়ম, সংকট আর সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘নষ্ট রাজনীতি’ ও নৈতিক স্খলন এখন প্রকট আকারে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় তার আদর্শ ও উদ্দেশের জায়গায় আর নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতন এখন চরম পর্যায়ে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বীন ইসলাম যার প্রমাণ। মেয়ে শিক্ষার্থীদের তারা নানাভাবে হেনস্তা ও যৌন হয়রানি করে থাকেন। যেগুলো ওপেন-সিক্রেট, সবার জানা। কিন্তু ভুক্তভোগী অনেক মেয়ে নিজের ভবিষ্যৎ আর সামাজিকতার কথা ভেবে নিশ্চুপ থাকেন। একে ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’ বলে মেনে নিয়ে মানিয়ে চলেন। কঠিন এক মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করতে হয়। তবে কেউ কেউ এ যাত্রায় টিকে থাকতে পারেন না। যেমনটা পারেননি ফাইরুজ অবন্তিকা। নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

অবন্তিকার আত্মহত্যা এক নীরব প্রতিবাদ। তার এই আত্মহত্যা আমাদের জন্য বড়ো এক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। তার আত্মবিসর্জন এই সমাজ আর রাষ্ট্রের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে শিক্ষাঙ্গনে মেয়েরা কতোটা সহিংসতার শিকার হয়, তারা কতোটা অনিরাপদ। অবন্তিকার আত্মহত্যা আরেকটি বার্তা দিলো। শিক্ষাঙ্গনে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মতো আর কেউ যাতে এমন সহিংসতার শিকার হয়ে চিরমুক্তির পথ বেছে না নেন।

আমরা তো এক অবন্তিকাকে হারালাম। আর কোনো অবন্তিকা যাতে সে পথে না যান, সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবো তো? আর অবন্তিকার অভিযুক্ত ঘাতকদের কি কিছু হবে? বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে ‘কিছু না হলেও’ অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৭ কলেজ নিয়ে পরিকল্পনা জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha ৭ কলেজ নিয়ে পরিকল্পনা জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা অটোরিকশার ধাক্কায় ছাত্রীর মৃত্যু, ৮ দাবিতে জাবিতে ব্লকেড - dainik shiksha অটোরিকশার ধাক্কায় ছাত্রীর মৃত্যু, ৮ দাবিতে জাবিতে ব্লকেড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা ছাত্রাবাস খোলার দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ছাত্রাবাস খোলার দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ট্রাম্প প্রশাসনে শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন লিন্ডা ম্যাকমোহন - dainik shiksha ট্রাম্প প্রশাসনে শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন লিন্ডা ম্যাকমোহন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ - dainik shiksha চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বাউবিতে বিএড প্রোগ্রামে ভর্তি, আবেদন ফি ৭০০ - dainik shiksha বাউবিতে বিএড প্রোগ্রামে ভর্তি, আবেদন ফি ৭০০ চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ - dainik shiksha চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044920444488525