দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে তাকে বাঁচাতে চেয়েছিলো সহপাঠীরা। তার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সহপাঠী ওই সময় তার মোবাইলে কল করেছিল। তবে কারও কলই তিনি রিসিভ করেননি।
জবির আইন বিভাগের ছাত্র ও অবন্তিকার সহপাঠী মো. ফয়সাল আজ রোববার দুপুরে তার ফেসবুক পোস্টে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি লিখেন, ‘৩ থেকে ৪ মিনিটের মধ্যে (প্রথম লাইন পড়ে) নিউজফিডে দেখেই সঙ্গে সঙ্গে ওর নাম্বারে বারবার ফোন দেই। রিং হচ্ছে! সে তখনোও প্রিপারেশন নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছিলো। আমার মন বলতেছিলো, সে আমার কল দেখেছে।’
অবন্তিকার সহপাঠী ফয়সাল আরও বলেন, ‘স্ট্যাটাসর কয়েক মিনিট পর্যন্ত যারা যারা কল দিয়েছিলো সবার কলই দেখেছে। অবন্তিকা এতোটাই মর্মান্তিক অবস্থায় ছিলো যে, ওই সময়ে এতোগুলো মানুষের ফোনকল বা তাকে বাঁচানোর জন্যে। মানুষদের আপ্রাণ চেষ্টা চালানো দেখেও তাকে টনক নড়াতে পারেনি। ওই দুইটা মানুষের অমানসিক নির্যাতন তাকে এতোটাই তিলে তিলে গ্রাস করে ফেলেছিলো। কলে না পেয়ে আমি তার স্ট্যাস্টাস পুরোটা পড়তে যাই। শেষের দিকটায় চোখ পড়তেই আমার হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দিছিলো, বুঝতেছিলাম না ওই মুহুর্তে কি করা যায়। পরে অবন্তিকার মায়ের নাম্বারে ফোন দিতে শুরু করি। ওই পাশ থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ। ততক্ষণে বুঝে গেছিলাম সব শেষ।’
অবন্তিকার সহপাঠী বলেন, ‘ক্যাম্পাসের শুরু থেকেই অবন্তিকা আমাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড। ক্যাম্পাস লাইফের শুরুর দিনগুলো থেকে পুরান ঢাকা ও জগন্নাথের আঙিনায় কতো আড্ডা-খুনসুটি, ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া, কনসার্ট, একসঙ্গে ট্যুর, এমন কতো শত স্মৃতি। একটা পর্যায়ে এমনসব ঘুরাঘুরি কমতে শুরু করে স্বাভাবিকভাবেই তখন শুধু হাই-হেলো, খোঁজখবর বা প্রয়োজনীয় কথার বা কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়া।’
সহপাঠী আরও বলেন, ‘অবন্তিকার সঙ্গে যে ঝামেলাটা হয়েছিলো, এটা আমরা সবাই জানতাম। প্রাথমিকভাবে মীমাংসাও হয়েছিলো বলে শুনেছি আমরা। পরবর্তীতে ক্রমাগতভাবে মানসিক টর্চারের ব্যাপারগুলাতে আমরা অবগত ছিলাম না, এমনকি অবন্তিকাও গভীরভাবে শেয়ার করতো না। কিন্তু প্রায় ওরে খুব ডিপ্রেশড দেখাতো। কিছু জিজ্ঞেস করলে রেসপন্স আসতো আংকেলের মৃত্যু সে মেনে নিতে পারছে না, তাই এমন অবস্থায় থাকে। তার উপর ক্লাসে ওই ছেলেগুলোর সঙ্গে ঝামেলা লেগেই থাকতো (এটা যে এতো ভারী রুপ ধারণ করবে, এটা আমরা চিন্তাও করতে পারিনি)।’
তিনি আরও লিখেন, ‘অবন্তিকার স্ট্যাস্টাসকে সাক্ষ্য আইনের ভাষায় ডায়িং ডিক্লেয়ারেশন বলা হয়। ল্যাটিন টার্ম ‘Nemo moriturus praesumitur mentire’ (মিথ্যা বলার জন্য কেউ মারা যাবে বলে মনে করা হয় না) অর্থাৎ মরার আগে কেউ মিথ্যা বলতে পারে না। ডায়িং ডিক্লেয়ারেশন সত্য ও খাঁটি বলে বিশ্বাস হলে ঘোষণার ভিত্তিতে সমর্থনকারী সাক্ষ্যে অপরাধীকে সাব্যস্ত করা যেতে পারে।
জবির আইন বিভাগের ছাত্র ফয়সাল বলেন, আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত হোক এবং সুষ্ঠু বিচারে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।
অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম (শবনম) বলেন, মোবাইলে অবন্তিকার সহপাঠী অনেকেই কল করেছিল। কিন্তু ততক্ষণে আমরা দরজা ভেঙ্গে ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পাই।
কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, অবন্তিকার মোবাইলটি মামলার জন্য একটি বড় আলামত। এটি জব্দ করা হয়েছে। শিগগির তা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।
ওসি বলেন, অবন্তিকার মায়ের দায়ের করা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় গ্রেপ্তার সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দীককে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আনা হচ্ছে। আইনগত কিছু প্রক্রিয়া শেষে তাকে বিকেলের মধ্যেই আদালতে সোপর্দ করা হবে।