অবসরে গেলেও জাতীয়করণ করা কলেজের শিক্ষকরা কেন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
গতকাল সোমবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো: আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অবসরপ্রাপ্ত আটজন শিক্ষকের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করা আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে থেকে সরকারীকরণের জন্য পর্যায়ক্রমে ৩০৩টি কলেজ নির্বাচন করা হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই গেজেট প্রকাশ করা হয়। ওই গেজেট প্রকাশের পর ইতোমধ্যে বিভিন্ন কলেজের অনেক প্রবীণ শিক্ষক অবসরে চলে গেছেন। এমপিওভুক্ত হয়ে অবসরে গেছেন কয়েক হাজার শিক্ষক। কিন্তু তাদের ন্যাশনাল পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সে কারণে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে কর্ণফুলী সরকারি কলেজ, রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজ এবং রাজস্থলী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত আটজন শিক্ষক হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত চার সপ্তাহের রুল জারি করে জানতে চান যে তাদের কেন সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে আত্তীকরণ করে জাতীয় পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করে সরকারীকরন থেকে সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে না।
রিট আবেদনের এ বিষয়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘৩০৩ কলেজ জাতীয়করণ, অবসরে গেলেও সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন শিক্ষকরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, ‘মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৩০২টি কলেজের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ১৪৫টি কলেজের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি কলেজে ফাইল যাচাই শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই ৫৫টি কলেজের মধ্যে ৪০টি কলেজের ফাইল পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। আর ২০টি কলেজের ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী, ২০টি কলেজের ফাইল এখন সচিব কমিটিতে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিটি কলেজের ফাইলেই রয়েছে দুই-একজন শিক্ষকের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তি। ফলে আপত্তি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসব কলেজের শিক্ষকদের আত্তীকরণের বিষয়ে অনুমোদনের জন্য সচিব কমিটিতে পাঠানো যাচ্ছে না। সচিব কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী, অনুমোদনের জন্য একটি কলেজের সব শিক্ষক-কর্মচারী-কর্মকর্তার তথ্য একসাথে পাঠাতে হবে। পৃথক পাঠানো যাবে না। এ কারণেই বিলম্ব হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, একজন বা দুইজন শিক্ষকের কারণে কলেজের সব শিক্ষকের সরকারীকরণ আটকে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ধীরগতি ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় এসব কাজ শেষ হওয়ার মধ্যে হয়তো আরো কয়েক হাজার শিক্ষক অবসরে চলে যাবেন। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত অবসর গ্রহণ করেন ৩৩৮ জন। আর জুলাই ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অবসরে যান ১৬৯ জন। ২০২০ সালে অবসরে যান ৪৩৫ জন। তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে অবসরে যাবেন ৪৫০ জন। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ৪৫৮ জন, ২০২৩ সালে ৪৪৮ জন, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে ৪৫৬ জন এবং ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে অবসরে যাবেন ৫২৫ জন। চাকরিবিধি অনুযায়ী বয়স ৫৯ বছর হওয়ায় এ পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন।’