রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর মডেল কলেজে শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিও করার ক্ষেত্রে নজীরবিহীন দুর্নীতি ও জালিয়াতির সন্ধান মিলেছে। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে কলেজটিতে ১১ জন শিক্ষক নিয়োগের বোর্ডে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিষয় বিশেষজ্ঞ করা হয় কয়েকটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষকদের। যদিও সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাড়া বিষয় বিশেষজ্ঞ হওয়ার নিয়ম নেয়। এসব অবৈধ বিষয় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন না নিয়োগ বোর্ডে। ১১ জন বিষয় বিশেষজ্ঞের অধিকাংশই ছিলেন বেসরকারি পচামাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক।
অবৈধ ভাবে নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষকদের এমপিও করা হয়েছে আরও নজীরবিহীন অনিয়মের মধ্য দিয়ে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতি পেলেও তার অনেক আগে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়েছেন তারা। এ জলিয়াতির ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরা।
পচামাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিষ্ণু পদ সাহা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ডিজির প্রতিনিধির অনুরোধে বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রভাষকদের পাঠানো হয়েছিলো। নিয়মের বিষয়ে জানা নেই। অন্যান্য বেসরকারি কলেজের বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে মনোনিত শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন না নিয়োগ বোর্ডে। তাদের সাক্ষর জাল করা হয়েছে। তারা উপস্থিত না থাকার লিখিত স্বীকারোক্তি পত্র দিয়েছেন তারা।
অবৈধভাবে নিয়োগের বিষয়ে তৎকালীন সভাপতি নাদিম মোস্তফা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অনেক আগের ঘটনা তাই মনে নেই।
বর্তমান সভাপতি নজরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখবো।
তৎকালীন অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান মারা যাওয়ার পর অবৈধ নিয়োগ পাওয়াদের মধ্য থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম অধ্যক্ষ হয়েছেন। তবে কলেজে গিয়েও পাওয়া যায়নি তাকে। মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। কথা বলতে রাজি হয়নি অন্য কোন শিক্ষকরাও।
শুধু নিয়োগের ক্ষেত্রের জালিয়াতি ও অনিয়ম নয়, জালিয়াতি করেছেন এমপিওর ক্ষেত্রেও। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে কলেজ একাডেমিক স্বীকৃতি পেলেও পেলেও কলেজের অবৈধ শিক্ষকদের এমপিও হয়েছে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে।
একাডেমিক স্বীকৃতির আগে এমপিওভুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাহবুবুর রহমান শাহ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, একাডেমিক স্বীকৃতি আগে এমপিও হতে পারে না। নিয়োগ প্রক্রিয়া ও এমপিওর বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে খতিয়ে দেখা হবে।
এ জালিয়াতির ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক দীপকেন্দ্র নাথ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা কোনভাবেই নিয়োগ বোর্ডে থাকতে পারবে না। আর একাডেমিক অনুমোদের আগে এমপিও হওয়ার সুযোগ নেই।