প্রধান শিক্ষক হতে ১২ বছর এমপিওভুক্ত পদে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। কিন্তু ৯ বছর ৭ মাস অভিজ্ঞতা নিয়েই তিনি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তথ্য গোপন করে হয়েছিলেন এমপিওভুক্তও। আট বছরেরও বেশি সময় অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক পদের বেতন। তিন বছর আগে তদন্তে এসব অভিযোগ প্রমাণ হলেও এখনো অবৈধভাবে এমপিও ভোগ করছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে শিক্ষা প্রশাসন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে দফায় দফায় শোকজ করা হলেও কোনো অদৃশ্য কারণে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
ওই প্রধান শিক্ষকের নাম মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাড়ীখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত।
দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত হওয়া ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছিলো। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে তা তদন্ত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পান মাগুরার তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার মজুমদার। অভিযোগ তদন্ত করে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠান ওই শিক্ষা কর্মকর্তা।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদের অভিজ্ঞতা সনদ ও প্রথম এমপিওভুক্তি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হতে এমপিও থেকে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে আবুল কালাম আজাদের ছিলো ৯ বছর ৭ মাসের অভিজ্ঞতা।
তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে বলেছেন, রাড়ীখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হওয়ার আগে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন আবুল কালাম আজাদ। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার পর ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ওই পদে এমপিওভুক্ত হন তিনি। কিন্তু এর সাড়ে নয় বছরের মাথায় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে তিনি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। বারো বছরের বদলে নয় বছর সাত মাস অভিজ্ঞতা নিয়েই তিনি প্রধান শিক্ষক পদে এমপিওভুক্ত হয়েছেন ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে।
২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার প্রায় ১১ মাস পর ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে তাকে প্রথম শোকজ করা হয়। এখন পর্যন্ত অধিদপ্তর তাকে ছয় দফা শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে।
গত ২৯ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সর্বশেষ শোকজ নোটিশে বলা হয়, অভিজ্ঞতাবিহীন নিয়োগ ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে এমপিওভুক্ত হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শোকজ করা হলেও জবাব না দিয়ে আপোষনামা করে বাদি-বিবাদির যৌথ স্বাক্ষরে জবাব দেন। যা কাম্য নয়। আপনার বিরুদ্ধে কেনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি শোকজ করা হলেও জবাব পাওয়া যানি।
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আব্দুস সালাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, অভিজ্ঞতা ছাড়া নিয়োগ ও নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদকে ছয় মাস আগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি বরখাস্তকালীন প্রথম দুই মাস অর্ধেক বেতন পেয়েছেন। কিন্তু এরপর থেকে পুরো বেতন ভাতা পাচ্ছেন। শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা শোকজ নোটিশ নিয়ে লুকোচুরি খেলছেন।
তবে অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে দাবি করেন, তার নিয়োগ বৈধ। তিনি বরখাস্ত নন, বরং দায়িত্বে আছেন। শোকজ নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি জবাব দাখিল করেছি। কতোবার শোকজ নোটিশ পেয়েছেন জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, কতবার পাঠিয়েছে জানি না, আমি একবার হাতে পেয়েছি, ঈদের আগে। জবাব জমা দেয়া হয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাকে একবার শোকজ করলেই হয়। প্রথমবার জবাব না দিলে দ্বিতীয়বার শোকজ করা যেতে পারে। তারপরও জবাব না দিলে বারবার শোকজ না করেও ব্যবস্থা নিতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ওই প্রতিষ্ঠান প্রধান শোকজের জবাব দিচ্ছিলেন না। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তার জবাব ছাড়াই ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর। কিন্তু তিনি সম্প্রতি শোকজের জবাব দিয়েছেন। আমরা খুব শিগগিরই সার্বিক বিষয় জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠাবো। মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেবে সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।