দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, আমরা এমন একটা মানসিকতা তৈরি করেছি, মার্কস না থাকলে কিছুই করতে চাই না। এটা বিশেষ করে শহর অঞ্চলে দেখা যায়, সেজন্য অবশ্যই স্কাউটদের ক্রেডিট দেয়ার প্রয়োজন আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্কাউটস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
স্কাউটদের মার্কিং স্কিমের মধ্যে আনার চেষ্টা করবো, আমাদের সন্তানরা সেটা যেনো পান। আমাদের নতুন কারিকুলামের মধ্যে স্কাউটিং থাকবে।
তিনি বলেন, স্কাউটিং কার্যক্রমকে শিক্ষাক্রমের মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে। সেটা যেনো করতে পারি সেজন্য আমাদের এনসিটিবির যে মূল্যায়ন পদ্ধতি আছে, সেখানেও এ প্রস্তাব দেয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রকৃতি থেকে শেখার মানসিকতা যদি না থাকে তাহলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে কষ্ট হবে। তাই নতুন শিক্ষাক্রমে জীবন ও জীবিকাসহ আরো অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে এসব বিষয় শিখন ফল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম চিফ স্কাউটস। স্কাউটস আন্দোলন এতোটুকু এগিয়ে গিয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। প্রান্তিক পর্যায় থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন স্কাউটস কার্যক্রম আছে। তারা নানা বিষয়ে যে ভূমিকা রাখছেন এটি সম্ভব হতো না যদি স্বাধীন বাংলাদেশের সেই অভ্যুদয়ের সময় বঙ্গবন্ধু সেই আর্ন্তজাতিক আন্দোলন না করতেন। বঙ্গবন্ধু স্কাউটিং ভালোবাসতেন এবং তরুণ প্রজন্মকে সুশৃঙ্খল করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। আজকের বাংলাদেশ আমাদের গর্ব।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সবার নাম লিপিবদ্ধ করে রাখার কথা। আরো অনেক প্রস্তাব এসেছে, আমরা অবশ্যই সেগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, স্কাউটস নেতারা জানেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার বাবার মতো স্কাউটস ভালোবাসেন। তিনি স্কাউটিং আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের এই প্রজন্মকে স্মার্ট করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। স্কাউটিংকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। স্কাউটিংয়ে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগও আছে। স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে চরিত্র গঠন, দক্ষতা বৃদ্ধি করা আমাদের এই প্রজন্মের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা তার প্রত্যাশা।
এ সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের স্কাউটসের উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের সন্তানরা স্কাউটিংয়ের মূল দর্শন যেনো ধারণ করতে পারেন এবং কর্মসূচিগুলোতে যেনো তারা স্কাউটস হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারেন সেই প্রচেষ্টা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে। স্কাউটিংয়ের যে প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রম রয়েছে সেগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা ফলাফল ও পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীলতা দিয়ে কিন্তু আমরা স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি করতে পারবো না। আর স্মার্ট জেনারেশন তৈরি করতে না পারলে চর্তুথ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে যেসব পরিবর্তন আসছে সেই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আমাদের প্রজন্মের অনেক কষ্ট হবে।
তিনি বলেন, শহর অঞ্চলের অভিভাবকদের মধ্যে ফলাফলের ওপরে অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা, শিক্ষার্থীদেরকে চাপ দেয়ার একটা প্রবণতা থাকে। ফলে আমাদের সন্তানরা সমাজকে না জেনে অপরকে সহযোগিতা করার মানসিকতা ধারণ না করে অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বেড়ে উঠছেন।
মন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে আমরা এই প্রজন্মকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী করে তুলবো এবং আমরা এই রূপান্তরের কথাটাই বলছি। এটা কখনোই সম্ভব হবে না যদি মানসিকতার পরিবর্তন না হয়। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও ফলাফলের ওপর নির্ভর করে থাকলে আমরা যে স্বপ্ন দেখছি- বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার সেটা অর্জন করা কঠিন হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্পেশাল ইভেন্টসের জাতীয় কমিশনার মো. ফসিউল্লাহ্। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্কাউটসের উপদেষ্টা ড. শাহ মোহাম্মদ ফরিদ ও ড. মো. আবদুল করিম, স্পেশাল ইভেন্টস বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি মো. মফিজুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান।