আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পরপরই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে বক্তব্য প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মো: মাহবুবুর রহমান খান এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়েছে, অতিসম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করে তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় সংঘটিত অপরাধের সাথে জড়িয়ে গ্রেফতার করা ব্যক্তিবর্গকে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করে বক্তব্য প্রচার করানো হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এরূপ কার্যক্রম শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতই নয় বরং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ।
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারার বিধানমতে, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করার এখতিয়ার রয়েছে একমাত্র বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের। এছাড়া মামলার তদন্তের প্রয়োজনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতের আদেশ অনুযায়ী রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে রিমান্ড প্রতিবেদন দাখিল করার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার রয়েছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদেরকে দিয়ে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য প্রচারের সুযোগ নেই।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, ফৌজদারী অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি পুলিশ কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকাকালীন গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে বক্তব্য প্রচার না করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে। আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি বনাম রাষ্ট্র মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের রেফারেন্স দিয়েছেন।
কোর্টের রেফারেন্স দিয়ে লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, ফৌজদারী বিবিধ মামলা নং- ৪৭২৫৩/২০১৯-এ প্রচারিত রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, ‘এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা খুবই সংগত হবে যে, ইদানিং প্রায়শ লক্ষ করা যায় যে, বিভিন্ন আলোচিত অপরাধের তদন্ত চলাকালীন সময়ে পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার পূর্বেই বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়, যা অনেক সময় মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অমর্যাদাকর এবং অঅনুমোদনযোগ্য; এবং বিভিন্ন মামলার তদন্ত সম্পর্কে অতি উৎসাহ নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে ব্রিফিং করা হয়ে থাকে।’
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আমাদের আরো স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে মামলার তদন্ত এবং বিচার পর্যায়ে একজন অভিযুক্তের প্রাপ্ত আইনি অধিকার নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’
সুতরাং, পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য প্রচার করা আদালতের উপরোক্ত রায়ের পরিপন্থী এবং আদালত অবমাননার সামিল।
নোটিশ গ্রহিতাদেরকে এই মর্মে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, অত্র নোটিশ প্রাপ্তির পর কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করে উক্ত ব্যক্তির বক্তব্য প্রচার করা থেকে বিরত থাকবেন। অন্যথায় নোটিশ প্রেরণকারীরা মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে আদালত অবমাননার দরখাস্ত দাখিলসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা হলেন, অ্যাডভোকেট রাসেল আহম্মেদ, অ্যাডভোকেট আবদুল্যাহ আল মাহমুদ, অ্যাডভোকেট আল-ফয়সাল সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মো: মহসিন কবির, অ্যাডভোকেট মো: নজরুল ইসলাম ছোটন, অ্যাডভোকেট মো: শফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সামছুন নূর বাঁধন, অ্যাডভোকেট শাহরিয়ার মাহমুদ, অ্যাডভোকেট মো: নুরুল হুদা ও অ্যাডভোকেট রাশেদুল হক।