অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

দৈনিক শিক্ষাডটকম, মানিকগঞ্জ |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জে বিদ্যালয়ের হাজিরা মেশিনের প্রকৃত দামের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচারে মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক ইউছুব আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে। ইউছুব আলীর উথলী এজিএস স্কুলের শিক্ষক। 

গত ২৭শে মার্চ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. সালাউদ্দিন সরকার।

জানা গেছে, গত ১৯শে মার্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনার জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত  কমিটির সুপারিশের আলোকে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হয়।

সেইসঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২৩০ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রধান শিক্ষক মো. ইউছুব আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে বরখাস্ত থাকাকালীন সময়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তিনি তার মাসিক সরকারি মূল বেতনের অর্ধেক খোরাকি ভাতা পাবেন। এ বিষয়ে জানতে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক ইউছুব আলীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ছাড়া মোবাইলে খুদে বার্তা দিয়েও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার জানান, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অভিভাবকসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে অসদাচরণের কারণে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে এর অনুলিপি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

এর আগে গত ১৯শে মার্চ তারিখের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতদিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়া হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ওই চিঠির কোনো পাত্তা না দিয়ে উল্টো এক মাসের সময় চেয়ে আবেদন দেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কপি ঘেটে দেখা গেছে, প্রধান শিক্ষক প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকাসহ বিধিমালা মোতাবেক বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করতে পারবেন। কিন্তু ২০২৩ সালে প্রধান শিক্ষক বিধি বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন ভাউচারের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা খরচ করেছেন। এ ছাড়া তিনি গত বছর ২৬শে এপ্রিল

স্থানীয় অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৬১ হাজার ৫০০ টাকা উত্তোলন করলেও তিনি স্কুলের ক্যাশ রেজিস্টার্ডে কোনো হিসাব না দেখিয়ে পুরো টাকা গায়েব করে দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিত করতে দুটি বায়োমেট্রিক মেশিন কেনা হয়। যার দাম ধরা হয়েছে ৬১ হাজার ৫০০ টাকা। তার সে দুটি আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ২০ হাজার ও প্রতিস্থাপনের ১৩ হাজারসহ ৯৪ হাজার ৫ শত টাকা।

তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে হাজিরা মেশিনটি প্রকৃত দাম ৬ হাজার ৫০ টাকা হলেও বিল-ভাউচার অতিমাত্রায় করা হয়েছে। যা ৫ গুণের বেশি মূল্য দেখানো হয়েছে। স্কুলের  ১ হাজার টাকা ইন্টারনেট বিল করা হয় ৩ হাজার টাকা, গ্রীষ্মকালীন খেলাধুলার টাকা, স্কুলের পুরাতন বই বিক্রির টাকা, স্কুলের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার আইনজীবীর ব্যয়ের ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা আইনজীবীর স্বাক্ষর জাল করে হাতিয়ে নেয়াসহ নানান খাত দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন প্রধান শিক্ষক মো. ইউছুব আলী।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার জানান, গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও বিধিমালা মেনেই তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সিনিয়র শিক্ষক হোসনে আরাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। 

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতা আবুল খায়ের জানান, তিনি প্রধান শিক্ষকের সাময়িক বরখাস্তের অনুলিপি পেয়েছেন।  


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029652118682861