অর্ধেকে নেমেছে মেডিক্যালে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: বাংলাদেশে মেডিক্যালে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিক্যাল এডুকেশনের অনুমোদন না পেলে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন থেকে বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিএমডিসির সিদ্ধান্তহীনতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়েছে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের বাংলাদেশে এমবিবিএস ভর্তির ক্ষেত্রে। এ কারণে বছরে ২ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দে মোট ৩ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে পড়তে আসেন। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে তা নেমে আসে ১ হাজার ৭০০ জনে। 

ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিক্যাল এডুকেশনের অনুমোদন না পাওয়ায় হাতছাড়া হবে চাকরির বাজার, অংশগ্রহণ করতে পারবে না বহির্বিশ্বের কোনো ট্রেনিং প্রোগ্রামে। তার সঙ্গে প্রতিবছর যে আড়াই হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে পড়তে আসত তারাও বাংলাদেশ বিমুখ হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, পাকিস্তান এ স্বীকৃতি গত বছরের ডিসেম্বরে করে ফেললেও বাংলাদেশ এখনো তা করতে পারেনি।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি এন্ট্রান্স টেস্ট (এনইইটি) পরীক্ষায় পাশকৃত ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি তাদের দেশে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির সুযোগ করে দিচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশে আবার বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘ন্যূনতম জিপিএ ৭ অথবা বায়োলজিতে জিপিএ ৩ দশমিক ৫ না হলে ভর্তি হওয়া যাবে না’ বলে নানাবিধ শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এর ফলে ভারত, নেপালসহ অন্যান্য দেশের ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশে এমবিবিএসে ভর্তিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মানুযায়ী বিএমডিসি অনুমোদিত এমবিবিএস ভর্তিচ্ছু বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা বিএমডিসি কর্তৃক নির্ধারিত নম্বর পেলেই তারা বিশ্বের যে কোনো দেশে ভর্তি হতে পারবে এবং ডাক্তার হয়ে দেশে ফিরে ডাক্তারি করার সুযোগ পাচ্ছে। ভারতের ছাত্রছাত্রীরা যদি এনইইটি এবং নেপালের ছাত্রছাত্রীরা যদি নেপাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি) পরীক্ষায় পাশ করে সরাসরি এদেশে পড়ার সুযোগ না পায় তাহলে এমবিবিএসে ভর্তিচ্ছু বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বের যে কোনো দেশে পড়ার সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, যেহেতু বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষাজীবন শেষ করে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে ডাক্তারি শুরু করে। যেহেতু পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এনইইটি এবং এনএমসি পরীক্ষায় পাশকৃতরা এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পায়। সেহেতু বাংলাদেশে ভারত বা নেপালের ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি এমবিবিএসে ভর্তিতে সুযোগ করে দেওয়াই শ্রেয়। ভারত হতে প্রতি বছর কয়েক লাখ ছাত্রছাত্রী রাশিয়া, চীন, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশে এমবিবিএস পড়তে যায় এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে থাকে। অথচ বাংলাদেশের সংস্কৃতি, খাবার, পরিবেশের অভিন্নতা, হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল শিক্ষা প্রায় একই রকম হওয়ায় এবং অপেক্ষাকৃত কম টাকায় এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পাওয়ায় বাংলাদেশকেই তারা ১ নম্বর গন্তব্য মনে করে। এছাড়াও বাংলাদেশে লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও প্রায় একই রকম কারিকুলাম অনুসরণ করা হয় বিধায় দেশে ফিরে বাংলাদেশ ফেরত নতুন ডাক্তারদের নিজ দেশে লাইসেন্স পরীক্ষায় পাশ করা অনেক সহজ হয়ে থাকে। বিগত ১০ বছরের লাইসেন্স পরীক্ষা ও ফলাফল পর্যালোচনা করলেও এর সত্যতা মেলে।

বাংলাদেশের মেডিক্যাল শিক্ষাকে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে প্রয়োজনে যতদ্রুত সম্ভব দ্রুতগতিতে শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিক্যাল এডুকেশনের স্বীকৃতি গ্রহণ করার জন্য বিশেষজ্ঞরা তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়া এনইইটি এবং এনএমসি সম্পন্নকারী ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি বাংলাদেশে এমবিবিএস ভর্তির সুযোগ দেওয়া হলে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (মেডিক্যাল এডুকেশন) অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন মাহতাব এ বিষয়ে বলেন, আমরা ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিক্যাল এডুকেশনের স্বীকৃতি পেতে ইতিমধ্যেই কাজ করেছি। আশা করছি, দ্রুত আমরা এ অনুমোদন পেয়ে যাব। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমরা ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিক্যাল এডুকেশনের স্বীকৃতির জন্য কাজকর্ম ঘুছিয়ে এনেছি। ইতিমধ্যে ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই কাজ আরও এগিয়ে যাবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054981708526611