অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে বসে বিশ্বে নজরদারি আমেরিকার

আমাদের বার্তা ডেস্ক |

দু’টি পৃথক মহাদেশ। মাঝে আস্ত এক মহাসাগরের দূরত্ব। তবু কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের দেশই ‘পরম বন্ধু’ আমেরিকার। বিশ্বে নজরদারি চালাতে সেই ‘বন্ধু’কে পাশেও পেয়েছে তারা।

আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াকে আলাদা করে রেখেছে প্রশান্ত মহাসাগর। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাসাগর। তবে এই দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক বরাবর মধুর। অস্ট্রেলিয়াকে আমেরিকার বন্ধু রাষ্ট্রগুলির তালিকায় প্রথম সারিতেই রাখা হয়।

এ হেন ‘বন্ধু’ অস্ট্রেলিয়ার বুকেই বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত গোয়েন্দাঘাঁটি তৈরি করেছে আমেরিকা। সত্তরের দশক থেকে যা ক্রিয়াশীল। প্রতি মুহূর্তে বিশ্বের কোনায় কোনায় নজরদারি চলছে ওই ঘাঁটি থেকে।

আমেরিকার সেই গোয়েন্দাঘাঁটির নাম পাইন গ্যাপ। ঠিকানা অস্ট্রেলিয়ার ছোট্ট শহর অ্যালিস স্প্রিং। সেখানেই মরুভূমির ধু ধু প্রান্তরের মাঝে জেগে থাকা দ্বীপের মতো মাথা তুলে আছে আমেরিকার পাইন গ্যাপ।

অস্ট্রেলিয়ার মধ্য এবং পশ্চিমাংশের একটা বড় এলাকা জুড়ে রয়েছে মরুভূমি। যা মূলত পাঁচ ভাগে বিভক্ত। মাঝের অংশে রয়েছে পাইন গ্যাপ। অবস্থানই এই ঘাঁটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯০০ কিলোমিটার দূরে মরুভূমির মাঝে গোয়েন্দাঘাঁটি তৈরি করেছে আমেরিকা। ফলে আশপাশের সমুদ্র দিয়ে যদি কোনও বিদেশি গুপ্তচর জাহাজ যাতায়াত করে, তারা এই ঘাঁটির নাগাল পাবে না।

পাইন গ্যাপে অনেক অ্যান্টেনা বসানো আছে। কৃত্রিম উপগ্রহের দিকে তাক করা আছে সেই সব অ্যান্টেনা। উপগ্রহের সিগন্যাল অ্যান্টেনার মাধ্যমে গোয়েন্দাদের কাছে পৌঁছয়। পৃথিবীর কোথায় কখন কী ঘটছে, তার তথ্য চলে যায় ওয়াশিংটনে। কৃত্রিম উপগ্রহের সিগন্যালের নাগালও সমুদ্র থেকে পাওয়া সম্ভব নয়।

অস্ট্রেলিয়ার মধ্যভাগে ২৩.৮ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং ১৩৩.৭৪ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে পাইন গ্যাপ অবস্থিত। পূর্বে ৬০ ডিগ্রি এবং পশ্চিমে ১৫৩ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশের মধ্যে থাকা যে কোনও কৃত্রিম উপগ্রহের অবাধ সিগন্যালের জন্য এই অবস্থান উৎকৃষ্ট। সমগ্র চীন, উত্তর কোরিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং রাশিয়ার বড় অংশ এই দ্রাঘিমাংশের আওতায় রয়েছে। ফলে এই দেশগুলির অন্দরে নজরদারির জন্য পাইন গ্যাপ উপযুক্ত।

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই আমেরিকান গুপ্তচর ঘাঁটির কার্যকলাপ শুরু হয়। সে সময়ে বহু আমেরিকান পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় চলে এসেছিল। সেই থেকে তাঁরা সেখানেই বাস করছেন।

আমেরিকার বিভিন্ন গুপ্তচর সংস্থা বর্তমানে পাইন গ্যাপ থেকে ন’টি জিয়োসিংক্রোনাস স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ করে। সেখান থেকে সিগন্যাল ধরার জন্য রয়েছে ৪০টি আলাদা অ্যান্টেনা।

এই স্যাটেলাইটগুলি পৃথিবীর সঙ্গে একই দিকে প্রায় একই ভাবে ঘুরে চলেছে। ফলে এগুলি থেকে পাঠানো সিগন্যালের তথ্য প্রায় ১০০ শতাংশ সঠিক হিসাবে ধরা হয়। একই সময়ে এক জায়গা থেকে পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অংশ দেখা যায় এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।

পাইন গ্যাপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত স্যাটেলাইট ওরিয়ন-৫ পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, ওরিয়ন-৭ ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপ সুমাত্রার পশ্চিমাংশে এবং ওরিয়ন-৩ ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপ সুলাউইসির পশ্চিম দিকের উপর থেকে নজরদারি চালায়।

প্রতিটি স্যাটেলাইট পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ৪৬ হাজার কিলোমিটার উঁচুতে রয়েছে। সেখান থেকে পৃথিবীর বিরাট অংশ তাদের নজরদারির সীমায় ধরা পড়ে। পশ্চিম আফ্রিকা থেকে শুরু করে ইউক্রেন, পশ্চিম এশিয়া, আফগানিস্তান, রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অংশ এই তিন কৃত্তিম উপগ্রহের নজরদারির আওতায় রয়েছে।

আমেরিকার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে পাইন গ্যাপ থেকে সাহায্য পায় আরও চার দেশ। ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং নিউ জ়িল্যান্ডের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছেও স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য পৌঁছে যায়। আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং নিউ জ়িল্যান্ডকে একত্রে ‘ফাইভ আইস’ (পঞ্চআঁখি) বলা হয়।

পাইন গ্যাপ থেকে যে স্যাটেলাইটগুলি নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তারা আদতে কী করে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়া কেউ জানেন না। সিগন্যাল সম্বন্ধে কাকপক্ষীকেও কিছু টের পেতে দেন না গোয়েন্দারা। চূড়ান্ত গোপনীয়তাই পাইন গ্যাপের নিত্যসঙ্গী।

আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি বা সিআইএকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা বলা হয়। আমেরিকার ভার্জিনিয়া প্রদেশে তাদের সদর দফতর রয়েছে। কিন্তু কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে মরুভূমি থেকেই বিশ্বের আনাচকানাচে নজরদারির ৯০ শতাংশ কাজ করে সিআইএ। অস্ট্রেলিয়ার পাইন গ্যাপকে তাই সিআইএর ‘প্রাণভোমরা’ বলেন অনেকে। সূত্র: আনন্দবাজার

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005558967590332