দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: সিডনির ব্যাংকসটাউনের ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটারে আল তাজকিরাহ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে গত ১৮ মে দিনব্যাপী দ্বিতীয় বাৎসরিক জাতীয় কোরআন প্রতিযোগিতা ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি স্টেট থেকে আসা বিপুল সংখ্যক স্কুলশিক্ষার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার পর একইদিন বিকেলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে তিন হাজার ডলারসহ ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোর ফারহান জাহিন। পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় এবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে ভিক্টোরিয়া স্টেটের হাফসা বতুল ও সালমান মোহাম্মদ। এ বছরের জাতীয় কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকল বাছাইকৃত প্রতিযোগীকে শুভেচ্ছা পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রবাসী মুসলিমদের সামাজিক সংগঠন ইসলামিক প্র্যাকটিস অ্যান্ড দাওয়াহ সার্কেলের (আইপিডিসি) অধীনস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল তাজকিরাহ ইনস্টিটিউট চলতি বছরের পবিত্র রমজান মাসে দ্বিতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়াজুড়ে শিশু-কিশোরদের জন্য কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
দেশটির ছয়টি স্টেট তথা নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া, কুইনসল্যান্ড, সাউথ অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরিতে আল তাজকিরাহ ইনস্টিটিউট মুসলিমদের মধ্যে কোরআন শিক্ষা, হিফজ ও ইসলামিক শিক্ষার নিয়মিত কার্যক্রম চালায়। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের দ্বিতীয় কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় বয়সভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে প্রায় দুই হাজার প্রতিযোগী অংশ নেয়। একই প্রতিযোগিতায় দুই পারা কোরআন মুখস্থ করায় অংশ নেয় ৩৫০ জনেরও বেশি প্রতিযোগী।
রমজান মাসে সারা অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৫০টি ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৩০টি মসজিদ এ প্রতিযোগিতায় যুক্ত ছিল। পুরো প্রতিযোগিতা কর্মসূচিতে বিচারক ও আয়োজক হিসেবে ছিলেন ৭০ জনেরও বেশি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও ইমাম। প্রতিটি স্টেট থেকে তাজবীদসহ পবিত্র কোরআন শরীফের দুই পারা মুখস্থ তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিনজনকে জাতীয় কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।
আল তাজকিরাহ ইনস্টিটিউটের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো–অর্ডিনেটর শায়খ আবদুল রহমানের উপস্থাপনায় শনিবার সকাল ৯টায় আরম্ভ হওয়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আইপিডিসির সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট ড. রফিকুল ইসলাম। সেন্ট মেরিস মসজিদের ইমাম শায়খ আবু হোরায়রা কর্তৃক প্রতিযোগিতার নিয়মাবলি ও বিচারকদেরকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বক্তব্যের পর প্রতিযোগিতার মূল পর্ব শুরু হয়। দুপুর পর্যন্ত একটানা বিভিন্ন স্টেটের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এ শিশু-কিশোর প্রতিযোগীদের মনোমুগ্ধকর তেলাওয়াত শুনে সপরিবারে অংশ নেওয়া দর্শকরা আপ্লুত হন।
দুপুরে মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুরু হওয়া পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি ড. ইবরাহিম আবু মোহাম্মদ, ন্যাশনাল ইমাম কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শায়খ শাদী আল সুলাইমান, আইপিডিসির সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট ড. রফিকুল ইসলাম, প্রধান বিচারক শায়খ তারিক আল বিক্বায়ী, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান রহিম-আজিজ ফাউন্ডেশনের কর্ণধার আরিফুর রহমান ও ক্যাম্পবেলটাউন সিটি কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র ইব্রাহিম খলিল মাসুদ।
উপস্থিত প্রতিযোগী, অভিভাবক ও দর্শকদের উদ্দেশ্যে গ্র্যান্ড মুফতি ড. ইবরাহিম আবু মোহাম্মদ বলেন, ‘রাসুল (সা.) মসজিদ নির্মাণের আগে দীর্ঘ সময় ধরে সেজদাকারী বা মসজিদের ব্যবহারকারী তৈরি করেছেন। পবিত্র কোরআন হলো সেই মসজিদ ব্যবহারকারী উত্তম চরিত্রের মানুষদের শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশটিতে এমন মানুষ তৈরির জন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।’
শায়খ শাদী আল সুলাইমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘কোরআনের হাফেজদের পরকালে আল্লাহ বলবেন, তেলাওয়াত করো এবং জান্নাতে যাও। সেটিই হলো প্রকৃত সফলতা। আজকের এ চমৎকার প্রতিযোগিতা হলো সেই সফলতা অর্জনের পথে একটি পদক্ষেপ।’
আইপিডিসির সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট ড. রফিকুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে আয়োজক কোরআন শিক্ষক, সকল প্রতিযোগী ও অভিভাবকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা সমাজে উম্মাহর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ এবং আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পেরে আইপিডিসি ও আল তাজকিরাহ ইনস্টিটিউট আনন্দিত।’