আগামী বছরের এসএসসি- এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আট মাস ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজের ছুটি বাড়ানো হয়েছে, যদিও টেলিভিশনে ক্লাস প্রচারিত হয়েছে। শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে। এর পরও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই পড়ালেখার বাইরে রয়েছে। ফলে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শুক্রবার (২০ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় শিক্ষাপঞ্জি অনুসারে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। আর আগামী ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। নভেম্বর মাসে এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে এইচএসসির টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু একে তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তার ওপর করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের সিলেবাসও শেষ হয়নি। ফলে যথাসময়ে টেস্ট পরীক্ষাও নেওয়া যাচ্ছে না।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। তবে যেহেতু শীতকাল আসছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসারও আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাই আমাদের আরো কিছুটা দেখেশুনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এর আগেই করোনা পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। কারণ সব শিক্ষার্থী অনলাইন বা টেলিভিশন ক্লাসে যুক্ত হয়নি। বিশেষ করে মফস্বলের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি পিছিয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের সিলেবাসও শেষ করা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় আগামী বছর যথাসময়ে এসএসসি ও এইচএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক  বলেন, ‘প্রতিবছরের এই সময়ে এসএসসির ফরম পূরণ চলে। এইচএসসির প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। এবার যেহেতু গত মার্চ মাস থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই পরীক্ষার ব্যাপারে আমরা এখনই কিছু চিন্তা করতে পারছি না। পরীক্ষা পেছানো হবে কি না, সে ব্যাপারেও এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলুক, তার পরও আমরা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে পরিকল্পনা করব।’

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গ্রহণ করা না হলেও তাদের সম্পূর্ণ সিলেবাসই শেষ হয়েছে। কারণ চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবে পরীক্ষার সূচি প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই পরীক্ষা আর গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু তাদের সিলেবাস শেষ হয়েছে, তাই তাদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখাই ঠিকমতো হয়নি, সিলেবাস শেষ করা তো দূরের কথা। তাই তাদের বিকল্প কোনো উপায়ে মূল্যায়নের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। 

জানা যায়, নবম ও দশম শ্রেণির দুই বছর মিলিয়ে এসএসসির সিলেবাস তৈরি করা হয়। তারা দুই বছরেরও বেশি সময় পায়। যদিও বাস্তবে এসব শিক্ষার্থী ১৭ থেকে ১৮ মাস পাঠদান পেয়ে থাকে। অন্যদিকে এইচএসসি দুই বছরের প্রগ্রাম হলেও বাস্তবে পাঠদান হয়ে থাকে ১৬ মাসের মতো। সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।

অভিভাবকদের দাবি, শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো লেখাপড়া করিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, নয়তো এসব শিক্ষার্থীর দক্ষতা অর্জনে ঘাটতি থাকবে। পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।

মনিপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। সে খুবই মেধাবী ছাত্র। কিন্তু করোনায় চলতি বছর স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কতটুকু প্রস্তুতি সে নিয়েছে, তা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। এই পরীক্ষার ব্যাপারে অটো পাসের মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক, এটা আমি কোনোভাবেই চাই না। কিছুটা দেরি হলেও সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে পরীক্ষা নিয়েই যেন শিক্ষার্থীদের পরের ক্লাসে ওঠানো হয়, নয়তো ভবিষ্যতে সে আরো ক্ষতির মুখে পড়বে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026290416717529