আগামীর শিক্ষা সম্পূর্ণ ডিজিটাল হবে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেছেন, বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় অর্জিত সনদ আগামীর প্রযুক্তি সভ্যতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী নয়। নতুন প্রজন্মকে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে নিজেকে টিকে থাকার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
মোস্তাফা জব্বার আজ শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার আইডিইবি মিলনায়তনে ‘কবি নজরুল শিশু দিগন্ত, ময়মনসিংহ’ আয়োজিত শিশু-কিশোর মিলনমেলায় ‘ডিজিটাইজেশনে বাংলাদেশ ও শিশু কিশোরদের মেধা বিকাশে বিজয় শিশুশিক্ষার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সরকার শিক্ষাব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তরের কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেশের দুর্গম অঞ্চলে সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের সুযোগ পৌঁছে দিতে ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পার্বত্য অঞ্চলের ২৮টি পাড়ার কেন্দ্রে ডিজিটাল শিক্ষার অভিযাত্রা শুরু হয়েছে।’
কবি নজরুল শিশু দিগন্তের সভাপতি অ্যাডভোকেট রায়হানা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিজয় ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে শিশুশিক্ষাবিষয়ক ভূমিকা উপস্থাপন করেন বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী জেসমিন জুঁই।
অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ হামিদা আলী, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল, সুবিধা বঞ্চিত অঞ্চলে শিশুদের মধ্যে ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তার সংক্রান্ত প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল ওয়াহাব, বাংলাদেশ শিশু মেলা সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল্লাহ আনসারী, আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য কাব্য পরিষদের চেয়ারম্যান কবি নজরুল ইসলাম বাঙ্গালি, কবি নজরুল শিশু দিগন্তের সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন বাদল এবং অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক গাজী আলম ভূঁইয়া বক্তব্য দেন।
মন্ত্রী শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমারাই হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বড় শক্তি। তোমরা যদি ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন না কর, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার না জানো, তবে আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হব না।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘পৃথিবীর বড় লাইব্রেরি হচ্ছে ইন্টারনেট। এ থেকে শিশুদের বঞ্চিত রেখে আগামী দিনের উপযোগী শিক্ষা অর্জন সম্ভব নয়। শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরের চেয়ে ভালো কাজ হতে পারে না। শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরে ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দীর্ঘ পথচলায় নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েও শিশুশিক্ষার জন্য সফটওয়্যার বানিয়েছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যে শিশুরা পড়তে চায় না, তাদের আগ্রহ সৃষ্টিতে ডিজিটাল কনটেন্টে পাঠ প্রদানের ফলপ্রসূ। শিশুরা খেলার ছলে তাদের এক বছরের সিলেবাস দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে সক্ষম হবে।’
নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলায় একটি ডিজিটাল স্কুলের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতেই হবে। নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে পারলে ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ।’
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট মানুষ চেয়েছেন উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা স্মার্ট হলে বাংলাদেশ স্মার্ট হবে।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এখনকার যুগে বাস করে তোমরা যদি কোনো ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করতে না পার, তবে তোমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। প্রচলিত শিক্ষা প্রতিনিয়তই বদলাচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাগুজে বইকে বিদায় করে ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে তোমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চালু হবে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়—যে দিন প্রতিটি শিক্ষার্থী ব্যাগে বই নয়, একটি ল্যাপটপ নিয়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। তোমার ওপরই নির্ভর করবে তোমার পরিবার, সমাজ সর্বোপরি দেশের রূপান্তর। সবার ওপরে দেশ। দেশের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।’