২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে হেফাজতকাণ্ডে শাহবাগ থানায় নাশকতার অভিযোগে করা এক মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীর জামিন আবেদনের ওপর শুনানি দুই মাসের জন্য স্ট্যান্ডওভার (শুনানি মুলতবি) করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন।
শুনানিতে এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষে বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। তখন হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষকে বলেন, আগুন সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ কোর্টে আনবেন না। এসব কোর্টের বাইরের বিষয়। এভাবে কোর্টের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। কোর্ট তো ১৮ কোটি মানুষের।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ শাহীন মীরধা। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদুল হক।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে করা এ মামলায় আসলাম চৌধুরীকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। আদালত এ মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এর আগে তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। রোববার তদন্ত কর্মকর্তা হাজির হন।
শুনানির শুরুতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর বলেন, এ মামলায় অনেক আসামি আছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় প্রয়োজন। এ মামলার আসামি আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের অভিযোগ রয়েছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, তিনি আমেরিকা গেছে নাকি ইসরায়েল গেছেন, এসব আমরা দেখব না।
এক পর্যায়ে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশীদের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চেয়ে বলেন, তদন্ত শেষ করতে এত সময় নিচ্ছেন কেন? এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে পারবেন না? তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এ মামলায় ১৮০ জন আসামি। তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অনেক সময় প্রয়োজন।
এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, সিনিয়রের সঙ্গে (অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল) যোগ করে আমি কিছু সাবমিশন রাখতে চাই। তিনি বলেন, একই ধরনের মামলায় আসলাম চৌধুরীকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু আপিল বিভাগ সেই জামিন স্থগিত করে দিয়েছেন। সারওয়ার হোসেন বাপ্পী আরও বলেন, এরা (বিএনপি) তো আবার আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে। তখন হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষকে আগুন সন্ত্রাসের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো কোর্টে টেনে না আনার জন্য বলেন।
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে আসলাম চৌধুরী ও তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. আসাদুজ্জামান মিয়াকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর)। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর ওই বছরের ২৬ মে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দায়ের করা হয় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। তার বিরুদ্ধে ভারতে গিয়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক কর্মকর্তার সঙ্গে ‘সরকার উৎখাতের’ জন্য আলোচনার অভিযোগ রয়েছে। দিল্লি ও আগ্রার তাজমহল এলাকায় ইসরায়েলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা-সাক্ষাতের বেশ কিছু ছবি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রয়েছে। ৭ বছর ধরে তিনি কারাগারে রয়েছেন। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে জিয়া পরিষদের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন আসলাম চৌধুরী।