জামায়াত-শিবিরকে আজ বুধবারের মধ্যে নিষিদ্ধ করা হবে। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এটি করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা জানান।
কোন প্রক্রিয়ায় এটি করা হবে, তা ঠিক করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বসে ১৪ দলীয় জোট। জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের শুরুতে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে যে নাশকতা, আগুন দেয়ার ঘটনা ও পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে, এর পেছনে জামায়াত-শিবির রয়েছে। এ বিষয়ে আমার কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত লোকজনকে ঢাকায় জড়ো করা হয়। তারাই এসব অপকর্ম করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে হলে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর শরিক দলের নেতারা একে একে বক্তৃতা করেন।
১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম তার বক্তব্যে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রস্তাব দেন। তারপর সবাই হাত তুলে সমর্থন জানালে ওই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সভার সমাপ্তি বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, আদালত যখন জামায়াতের নির্বাচন বাতিল করলো, তখনই তাদের নিষিদ্ধ করা দরকার ছিলো, তাহলে এতো প্রাণহানি (কমপ্লিট শাটডাউনে) হতো না।
প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিলো। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দেয়। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে মাঠে ছিলো জামায়াত। তারা অসংখ্য বাংলাদেশিকে হত্যা ও ধর্ষণ করেছে। তারাই দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ২ দিন আগে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ আছে। ইত্যোমধ্যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করার জন্য একটি আইনের খসড়া কয়েক বছর আগে তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়। পরে সে বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। এই জামায়াতেরওই ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমপ্লিট শাটডাউন চলাকালে শিবিরের ক্যাডাররা কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর পায়ে রগ কেটে দিয়েছে বলে অভিযোগ আছে।