সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাই জগলুল ওয়াহিদের মৃত্যুর পরদিন তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয়ার মামলায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুরকে গ্রেফতার করেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট ( (সিআইডি)। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন (উত্তর) সিআইডির উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুজ্জামান।
আদালতে দুই বোনের পক্ষে শুনানি করেন মনজিল মোরসেদ। অপরদিকে দুই মেয়ের সৎ মা আঞ্জু কাপুরের পক্ষে শুনানি করেন মাসউদ আর সোবহান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এর আগে জগলুল ওয়াহিদের মৃত্যুর সংবাদ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে পরদিন তার অ্যাকাউন্ট থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ ওঠে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুরের বিরুদ্ধে। পরে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা করেন জগলুল ওয়াহিদের প্রথম স্ত্রীর সন্তান মুশফিকা মোস্তফা (৩৫)।
২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর দণ্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের স্বতপ্রণোদিত আদেশের পর সিটি ব্যাংকে আমার বাবার ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট সংগ্রহের জন্য যাই। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রদান করে। ঐ স্টেটমেন্টে দেখতে পাই যে, আমার বাবার মৃত্যুর পরের দিন ১১ অক্টোবর সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টার মধ্যে যে কোন সময় আমার বাবার হিসাব থেকে চেক মারফত এক কোটি ৪০ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা আমাকে জানান, আসামি আঞ্জু কাপুর আমার বাবার মৃত্যুর খবর গোপন করে টাকা উত্তোলন করেছে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, প্রচলিত আইন অনুযায়ী আমার বাবার মৃত্যুর পর আঞ্জু কাপুরের ম্যানডাটি (জীবিত অবস্থায় টাকা উত্তোলনের অনুমতি প্রদান) ক্ষমতা আর বলবত থাকে না। তাই উনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আমার বাবার মৃত্যুর খবর অবগত না করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অকার্যকর ম্যানডাটির উপর ভিত্তি করে ঐ টাকা উত্তোলন করে। যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য ও হকদার।
এর আগে কয়েকটি গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর বাড়িটি। গৃহকর্তার মৃত্যুর পর মালিকানা নিয়ে বিরোধে তার দুই মেয়ে অবস্থান নিয়েছেন বাড়ির সামনে। ওই দুই বোনের দাবি, বাড়ির দখল বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের হাতে। তিনি কিছুতেই ওই বাড়িতে তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। গত ১০ অক্টোবর মোস্তফা জগলুলের মৃত্যু হয়।
মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ পেশায় পাইলট ছিলেন। ভাইবোনদের মধ্যে শুধু সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশে নেই। দুই দিন ধরে বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ে মুশফিকা ও মোবাশ্বেরা। তারা বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
মুশফিকা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের তার বাবা মাকে নিয়ে গুলশানের এই বাসাতেই সংসার শুরু করেছিলেন। তাদের জন্ম এই বাড়িতে। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের তাদের মা–বাবার বিচ্ছেদ হয়। পরে আঞ্জু কাপুর নামের এক ভারতীয়কে তাদের বাবা বিয়ে করেন। তিনি একাই এখন এই বাড়ির ভোগদখল করছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরে সেসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই দুই মেয়েকে রাতেই সেই বাড়িতে প্রবেশ ও অবস্থান নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গুলশান থানার ওসিকে ওই নির্দেশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুই বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়। এরপর থেকে দুই মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছিলেন আদালত।