আদালতে হাজিরা দিলেও অধরা হেলেনা, পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

জয়যাত্রা টিভির চেয়ারম্যান হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে প্রতারণার এক মামলায় দুই বছরের সাজা হওয়ার পর থেকেই পলাতক তিনি। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে। পাঁচ মাসের বেশি পার হলেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অথচ তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে অন্য মামলায় হাজিরাও দিয়েছেন। আর এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, পুলিশের অবহেলা রয়েছে।

মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্লবী থানায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলা তদন্তাধীন। গত ৯ জুলাই অসুস্থ উল্লেখ করে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে সময়ের আবেদন করেন। পরে ১০ আগস্ট হেলেনা নিজে উপস্থিত হয়ে আদালতে হাজিরা দেন। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর এ মামলায় তার হাজিরার জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

গত ১০ জুলাই বিশেষ ক্ষমতা আইনের  মামলায় হেলেনা জাহাঙ্গীর ঢাকার বিশেষ ট্রাইবুনাল-৫ বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদেরের আদালতে হাজিরা দেন। ওইদিন এ মামলার অভিযোগ গঠনের সময় চেয়ে আবেদন করেন। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ তার মাদকের মামলাও অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। তিনি এ মামলায় জামিনে রয়েছেন। বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মাদকের পৃথক দুই মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য ৩১ আগস্ট দিন ধার্য রয়েছে। অসুস্থ থাকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত ১০ আগস্ট তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন করেন। আদালত শেষবারের মতো আবেদনটি মঞ্জুর করে আগামী ১০ অক্টোবর অভিযোগ গঠন শুনানি ও হাজিরার জন্য দিন ধার্য করেছেন। এ ছাড়া ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে তার আরেকটি মামলা বিচারাধীন। সেই মামলায়ও তিনি পলাতক। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, একটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, একটি হরিণের চামড়া, দুটি মোবাইল ফোন, ১৯টি চেক বই ও বিদেশি মুদ্রা, দুটি ওয়াকিটকি সেট এবং জুয়া (ক্যাসিনো) খেলার ৪৫৬টি চিপস জব্দ করা হয়। ওই রাতে মিরপুরে জয়যাত্রা টেলিভিশনের কার্যালয়েও অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)। বিটিআরসির সহযোগিতায় অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টেলিভিশন স্টেশন বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি অবৈধ মালপত্র জব্দ করা হয় সেই অভিযানে। পরে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করা হয়। সেসব মামলায় তাকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে জামিনে মুক্তি পান হেলেনা। পরে প্রতারণার মামলায় গত ২০ মার্চ ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ পাঁচজনের দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের সাজা দেওয়া হয়। রায় শেষে আদালত আসামি হেলেনাকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। গত ২ এপ্রিল আদালত থেকে গুলশান থানায় পরোয়ানা পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিএম ফরমান আলী বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর নামে কোনো পরোয়ানা আসছে কি না, খেয়াল নেই। অনেক পরোয়ানা তো থানায় আসে, দেখে বলতে হবে। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, একজন দণ্ডিত পলাতক আসামি প্রকাশ্যে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। অথচ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না, এটি পুলিশের অবহেলা। তাই এ বিষয়ে পুলিশের সতর্ক হওয়া উচিত।

পল্লবী থানার মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এস আই সেলিম রেজা বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর এ মামলায় জামিনে রয়েছেন। গত ১০ আগস্ট তিনি আদালতে হাজিরা দেন।

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, অসুস্থ থাকায় আদালত হেলেনা জাহাঙ্গীরকে শেষবারের মতো সময় দিয়েছেন। আগামী ১০ অক্টোবর এ মামলায় তার হাজিরা রয়েছে। ওইদিন আদালতে এ মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি হবে। হেলেনা জাহাঙ্গীরের আইনজীবী আব্দুর রব বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর আগে হাজিরা দিয়েছেন। অসুস্থ থাকায় এখন সময় আবেদন করা হয়েছে। উনি আগামী সপ্তাহে আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025689601898193