শিক্ষার্থীদের টাকা নিয়ে তাদের ছাড়াই শিক্ষা সফরে গেছেন বরিশাল উদয়ন স্কুলের শিক্ষকরা। অভিযোগ উঠেছে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিকোলাস লিটন টরেন্টোর নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের একটি দল কক্সবাজারে পাঁচ দিনের আনন্দ ভ্রমণে গেছেন। এতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বঞ্চিত হচ্ছে। ক্ষোভ তৈরি হয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে।
জানা গেছে, শিক্ষকরা গত সোমবার একটি বিলাসবহুল বাসে করে নগরীর চৌমাথা উদয়ন প্রাইমারি স্কুলের সামনে থেকে সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বাসের সামনে শিক্ষা সফরের ব্যানার ঝুলিয়ে দেন। কিন্তু বাসে ছিল না কোনো শিক্ষার্থী।
সফরে থাকা একজন শিক্ষক জানান, তারা দুই দিন সেন্টমার্টিন ও তিন দিন কক্সবাজারে অবস্থান করবেন। অন্য এক শিক্ষক বলেন, পাঁচ দিনের ভ্রমণের জন্য বাসভাড়া, খাওয়া এবং সেন্টমার্টিনের রিসোর্ট ভাড়ার খরচ মিলিয়ে জনপ্রতি প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। বাকিটা স্কুলের তহবিল থেকে দেওয়া হবে।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলছে, ‘আমাদের টাকায় স্যাররা আনন্দ ভ্রমণে যান। স্কুল বন্ধ দিয়ে যান, আমাদেরও নিতে পারতেন। যেহেতু আমাদের নেন না, তাহলে শিক্ষা সফরের জন্য আমদের টাকা নেন কেন?’
এক অভিভাবক বলেন, ‘শিক্ষার্থী ছাড়া সরকারি বিধিমালায় শিক্ষা সফরের সুযোগ নেই। স্কুলের তহবিল মানেই শিক্ষার্থীদের টাকা। আর সেই টাকায় শিক্ষার্থী ছাড়া স্কুল বন্ধ দিয়ে শিক্ষকরা আনন্দ ভ্রমণে যাওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’
শিক্ষা সফরের নামে পাঁচ দিনের আনন্দ ভ্রমণে যাওয়ার ব্যাপারে উদয়ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিকোলাস লিটন টরেন্টো বলেন, স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে এক দিন ছুটি, পরে দুদিন সাপ্তাহিক এবং পরবর্তী আরও দুদিন সংরক্ষিত ছুটি থেকে পাঁচ দিন ব্যয় করেছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অবগত কিনা বা তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জেলা প্রশাসকের অনুমতি রয়েছে বললেও পরে অনুমোদনের বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে যান।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ফাদার লাজারুস গোমেজ বলেছেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এটি একটি নিয়মিত শিডিউল। তাই এই ভ্রমণের অর্থ ব্যয়ের জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটির সভায় অনুমোদন ও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, উদয়ন স্কুল অনুমতি নেয়নি। এ বিষয়ে শিক্ষা ও আইসিটি অফিসার মনদীপ ঘরাই বলেন, নিয়ম থাকলেও তারা যেহেতু অনুমতি নেননি। তদন্তপূর্বক আমরা ব্যবস্থা নেব।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সফরে যাওয়ার সুযোগ আছে। শিক্ষার্থী ছাড়া শিক্ষা সফর হয় না। এটা বেআইনি। শিক্ষকরা আনন্দ ভ্রমণে গেছেন কিনা, তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।