আনসার আল ইসলাম সন্দেহে ছাত্রী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক |

‘সহিংস জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ’ সন্দেহে এক কলেজছাত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। আজ রোববার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান ও উপমহাপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ওই কলেজছাত্রীর নাম জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা (১৯)। তিনি আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসির প্রধান বলেন, এই জঙ্গি সংগঠনটিতে এর আগে কোনো নারী সদস্য ছিল বলে জানা যায়নি। এই প্রথম এই সংগঠনের কোনো নারী সদস্য গ্রেফতার হলেন।

আনসার আল ইসলাম আল–কায়েদাপন্থী জঙ্গি সংগঠন। ২৬ আগস্ট বাড্ডা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এই মুহূর্তে সিটিটিসির কাছে রিমান্ডে আছেন। ভোলার লালমোহন উপজেলার বাসিন্দা জোবায়দার বাবা একজন শিক্ষক।

পরিবারকে উদ্ধৃত করে পুলিশ বলছে, কলেজছাত্রীর মা–বাবা তাঁর মধ্যে পরিবর্তন ঘটার বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। সে কারণে তাঁকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। জোবায়দা পাত্রের সঙ্গে দেখা করে ‘শহীদ’ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ও বিয়ে ভেঙে দেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জোবায়দা জানান, তিনি ২০২০ সালের প্রথম দিকে নিজের নাম–পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে একটি ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন। একসময় তিনি ফেসবুকে আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ‘তিতুমীর মিডিয়া’র খোঁজ পান। তখন তিনি এই পেজে যুক্ত হয়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও, অডিও ও লেখা পড়তে শুরু করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর ‘তিতুমীর মিডিয়া’র পেজের অ্যাডমিনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরে ‘তিতুমীর মিডিয়া’র পেজের ওই অ্যাডমিন আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের লিংক তাঁকে দেন।

জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা। ছবি : সংগ্রহীত

ওই লিংক থেকে জোবায়দা আনসার আল ইসলামের সেসব অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ঢুকতে শুরু করেন। মূলত এই সময় থেকে তিনি উগ্রবাদী মতাদর্শ নিজে কঠোরভাবে অনুশীলন করতে থাকেন। এই মতাদর্শকে সবার মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে বেছে নেন।

জোবায়দা ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও ‘চার্পওয়্যার’ নামের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তিনি ছদ্মনামে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলেন। প্রাথমিক তদন্তে তাঁর দুটি ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, একটি ‘চার্পওয়্যার’ ও চারটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায়। ফেসবুকে ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাপকভাবে আনসার আল ইসলামের উগ্রবাদী সহিংস মতাদর্শ প্রচার, বিভিন্ন উগ্রবাদী প্রচারণাকারী আইডির সঙ্গে যোগাযোগ ও বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে আলাচনা করতেন।

জোবায়দা আনসার আল ইসলামের যোগাযোগের প্রিয় মাধ্যম টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতেন। তাঁর চারটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এগুলো দিয়ে তিনি ১৫টির বেশি চ্যানেল পরিচালনা করতেন।

আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও, ছবি ও ফাইল এসব চ্যানেল‌ থেকে প্রচার করা হতো। তাঁর অনুসারীর সংখ্যা অনুমানিক ২৫ হাজার।

জোবায়দার চ্যানেলে প্রচারিত কনটেন্টগুলোর মধ্যে আছে ‘জিহাদ কেন প্রয়াজন’, ‘কিতাবুল জিহাদ’, ‘একাকী শিকারি লোন উলফ’, ‘স্লিপার সেলগুলোতে গোয়েন্দা অনুপ্রবেশ ও প্রতিরোধের উপায়’, ‘নীরবে হত্যার কৌশল’, ‘পুলিশ শরিয়তের শত্রু’, ‘লোন উলফ বালাকোট মিডিয়া’, ‘আনসার ম্যাগাজিন ইস্যু’, ‘জিহাদের সাধারণ দিকনির্দেশনা’, ‘তাগুতের শাসন থেকে মুক্তির ঘোষণা’ ইত্যাদি।
এ ছাড়া তিনি নিজে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অফিশিয়াল চ্যানেলে যুক্ত ছিলেন। সেই চ্যানেলে আইডি, স্মোক বম্ব, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি তৈরি করা ও বিভিন্ন কৌশলগত ভিডিও ও ফাইল দেওয়া–নেওয়া করতেন। পুলিশ বলছে, জোবায়দা আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ‘চার্পওয়্যার’–এ অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশনা পেয়ে সেখানেও অ্যাকাউন্ট খুলে উগ্রবাদী প্রচারণা চালাতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জেনেছে, এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জোবায়দা সহিংসতায় অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করছিলেন। এ নিয়ে বাড্ডা থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। জোবায়দার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর বা তাঁর পরিবারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে পুলিশ জানাচ্ছে, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সৈয়দ জিয়াউল হকের কর্মী–সমর্থকদের উদ্দেশে লেখা কিছু নির্দেশনা হাতে পেয়েছিল তারা।

ওই নির্দেশনায় তারিখ দেওয়া আছে গত বছরের ২৯ রমজান। সেখানেই প্রথম তিনি ‘ভাই ও বোনেরা’ বলে সম্বোধন করেন। এর আগে নারীদের প্রসঙ্গ একরকম উহ্যই ছিল দলটির সব কাজকর্মে।

জোবায়দা গ্রেফতার হওয়ার আগপর্যন্ত পুলিশের ধারণা ছিল, তারা যাঁকে খুঁজছে, তিনি পুরুষ। তবে আনসার আল ইসলাম জেনেবুঝেই নারীকে দলে ঢুকিয়েছে বলে তাদের আশঙ্কা। আরও নারী এই সংগঠনে যুক্ত হয়েছেন কি না, খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038139820098877