দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঝিনাইদহ: ‘নিখোঁজ থাকলে সন্ধান চাই, হত্যা হলে লাশ বা আলামত চাই’, স্লোগানে ৯টি দাবি জানিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে কালীগঞ্জের সব জনপ্রতিনিধিরা।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ স্কুলমাঠে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সম্মেলনে জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু। কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ, উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুজ্জামান রাসেল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহজনাজ পারভীন ছাড়াও আসনটির ১৫টি ইউনিয়নের সব চেয়ারম্যান, ইউপি
মেম্বার ও সব পৌর কাউন্সিলরসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এসএম জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু বলেন, এমপি আনারকে হারিয়ে যখন সমগ্র কালীগঞ্জবাসী শোকে মুহ্যমান, তখন ঝিনাইদহ-৪ নির্বাচনী এলাকার সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা এখানে একত্রিত হয়েছি। শুধু কালীগঞ্জবাসীর নেতা সংসদ সদস্য আনার আমাদের মাঝে অনুপস্থিত। এরকম একটি সময়ে কথা বলার মত ভাষা আমাদের নেই।
ঠান্ডু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রশাসনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা এমপি আনারের নিখোঁজ বা হত্যার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। আশা করছি, প্রশাসন দ্রুতই তদন্তের মধ্য দিয়ে বিষয়টি উদঘাটন করবেন। তারপরও আমরা প্রতিনিয়ত জনগণের কাছে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। কিন্তু তার কোনো সদুত্তর আমাদের কাছে নেই। এমন পরিস্থিতিতে তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আশায় কিছু দাবি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু বলেন, এমপি আনার টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এর আগে পৌর কমিশনার ও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। এমন একজন জননেতার নিখোঁজ বা হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারেন, তা আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা এ সংবাদ সম্মেলন থেকে তার ব্যবহৃত পাসপোর্ট, ঘড়ি, আংটি, চশমাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র এবং কথিত রক্তমাখা পোষাক উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলন আরো বলা হয়, হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করা হয়েছে, যা জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তপূর্বক সঠিক তথ্য প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। খুনি জিহাদ মুম্বাইতে কখন থেকে কার অধীনে কসাইগিরি করত। তার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবি জানাই। এছাড়াও খুনিরা হত্যাকাণ্ডে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তার তথ্য এবং সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।
জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু আরো বলেন, ২০০১-২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা মামলা ছাড়া আনার এমপির বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা ছিল না। অথচ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার। জনপ্রিয় একজন এমপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার না করে সঠিক ও সত্য তথ্য প্রচারের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলন বলা হয়, বিগত ১৭ বছরে আনার এমপির বিরুদ্ধে কথিত মাদক, হুন্ডি, সোনা চোরাচালানের কোনো মামলার প্রমাণ থেকে থাকলে তার তথ্য প্রকাশ করার দাবি করছি। এই হত্যাকাণ্ড সর্মথন জানিয়ে এবং সম্মানিত সংসদ সদস্যের চরিত্র হননের উদ্দেশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি নিদ্দিষ্ট গোষ্ঠীর অসংখ্য একাউন্ট বা আইডি থেকে প্রতিনিয়ত যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি। তার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে যারা বিভিন্নজনের কাছে এসএমএস বা কল দিয়েছে, তাদের পরিচয় উদঘাটন করে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা জাতীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার নিখোঁজ হয়ে থাকলে তার সন্ধান এবং হত্যা হয়ে থাকলে পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। শেষে তার সন্ধানে মোনাজাত করা হয়।