পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজ দিয়ে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। কথা ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি ওপেনার। ভারতের কাছে সুপার এইটের ম্যাচে হারার পর অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্য ঝুলে ছিল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের ওপর। আফগানিস্তানের জয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে মাইটি অস্ট্রেলিয়ার। বিদায় ওয়ার্নারেরও।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। এর মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে ওয়ার্নারের ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটল। সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় গতকাল সোমবার (২৪ জুন) রাতে সেন্ট লুসিয়ায় ভারতের বিপক্ষে হারা ম্যাচটাই জাতীয় দলের ক্যারিয়ারে তার শেষ ম্যাচ হয়ে থাকল।
অবশ্য ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে আউট হয়ে মাঠ ছাড়ার সময়ও ওয়ার্নার জানতেন না এটিই তার শেষ ম্যাচ হতে চলেছে। ভারতের দেয়া বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আর্শদীপ সিংয়ের করা প্রথম ওভারের শেষ বলে স্লিপে সূর্যকুমারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। জাতীয় দলের জার্সিতে শেষ ম্যাচটায় ৬ বল মোকাবেলা করে মাত্র ৬ রান করে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। মাঠ ছাড়ার সময় হতাশায় ব্যাট দিয়ে নিজের হাতে আঘাত করেন তিনি। মাঠ ছাড়ার সময় কোনো গার্ড অব অনার বা গ্যালারি থেকে স্ট্যান্ডিং অভিয়েশনও পাননি এই বাঁহাতি।
ওয়ার্নারের অবসরের প্রক্রিয়াটা অবশ্য ছিল ধারাবাহিক। এ বছর জানুয়ারিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনি টেস্ট দিয়ে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। জীবনের শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৪ রান ও শেষ ইনিংসে ৫৭ রান করেন। জয় দিয়েই টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করেন তিনি।
আর ওয়ানডে থেকে ওয়ার্নারের বিদায়টা হয়েছে রাজসিক। আহমেদাবাদে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালটাই ছিল তার ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে। সে ম্যাচে ভারতের দেয়া ২৪১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মোহাম্মদ শামির বলে আউট হওয়ার আগে ৭ রান করেন তিনি। তবে ট্রাভইস হেডের ১৩৭ রানের ইনিংসে ভর করে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা খুব একটা ভালো কাটেনি ওয়ার্নারের। প্রথম ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে ৫৬ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংসের বাইরে বলার মতো ইনিংস হচ্ছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ৩৯ রানের ইনিংসটি।
ওয়ার্নারের বিদায়ের বেদনা ছুঁয়ে গেছে তার সতীর্থদেরও। বাংলাদেশের ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে হ্যাজেলউড বলেন, 'এটা অবিশ্বাস্য ছিল (ওয়ার্নারের ক্যারিয়ার)। আমরা তাকে আমাদের গ্রুপে অবশ্যই মিস করব, মাঠে এবং মাঠের বাইরেও - সব ফরম্যাটেই অসাধারণ এক ক্যারিয়ার।'
তিনি যোগ করেন, 'আমরা এরই মধ্যে এর (ওয়ার্নারকে ছাড়া খেলার) কিছুটা স্বাদ পেয়েছি। এটা কিছুটা ধীরে ধীরে পুড়ে যাওয়ার মতো, টেস্ট ও ওয়ানডেতে এবং এখন টি-টোয়েন্টিতেও। তাকে ছাড়া জীবন কেমন তার কিছুটা অভিজ্ঞতা আমরা টি-টোয়েন্টিতেও পেয়েছি নিউজিল্যান্ডে। এটা সবসময় অন্যরকম, যখন আপনি এমন খেলোয়াড়কে হারাবেন, যিনি দীর্ঘদিন থেকে আপনার জন্য খেলছে। কিন্তু আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে এবং সামনে তাকাতে হবে।'
অস্ট্রেলিয়ার বিদায়ের পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ট্রাভিস হেড জানান, এভাবে ওয়ার্নারের বিদায়টা হতাশার। তিনি বলেন, 'আমরা হতাশ হব, যদি এভাবে ওয়ার্নারকে বিদায় জানাতে হয়, যেখানে আমাদের আরেকটা ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের টপ অর্ডারে তার (ওয়ার্নারের) অবদান নিয়ে অনেককিছুই বলা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, তিনি সব ফরম্যাট মিলিয়ে আমাদের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিদায় নিচ্ছেন। টপ অর্ডারে আমরা তার অভাব অনুভব করব, কিন্তু আশা করব আজ (সোমবার) রাতে এটা এভাবে শেষ না হোক।'
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মেলবোর্নে ওয়ানডে অভিষেক ওয়ার্নারের। এরপর একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সে বছরের ১৯ জানুয়ারি হোবার্টে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় তার। এরপর ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রিসবেনে টেস্টেও অভিষেক হয় ওয়ার্নারের।
১১২ টেস্টে ৪৪.৫৯ গড়ে ৮৭৮৬ রান করেছেন ওয়ার্নার। হাঁকিয়েছেন ২৬টি সেঞ্চুরি। ১৬১ ওয়ানডের ১৫৯ ইনিংসে ৪৫.৩০ গড়ে ৬৯৩২ রান করেছে তিনি। এই ফরম্যাটেও আছে ২২টি সেঞ্চুরি। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১১০ ম্যাচে ৩৩.৪৩ গড়ে ৩২৭৭ রান করেছেন ওয়ার্নার। এই ফরম্যাটেও আছে একটি সেঞ্চুরি। দুইবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি একবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়নও হয়েছেন তিনি।