ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ঈর্ষণীয়। কিছুদিন আগে এমনকি ভারতকেও হারিয়েছে ওয়ানডে ফরম্যাটে। সেই জায়গায় আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্ন দেখাটা মোটেও বাড়াবাড়ি ছিল না। অথচ দেখুন, উল্টো বাংলাদেশই পড়েছিল হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জার সামনে! তবে শেষে এসে জ্বলে উঠলো। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে শেষটা রাঙালো লাল-সবুজের দল।
আজ (মঙ্গলবার) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তৃতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিক বোলারদের সামনে ৪৫.২ ওভারে মাত্র ১২৬ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ বল আগেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। এরপরও সিরিজ জেতা হয়নি লিটন দাসদের। আফগানিস্তান প্রথম দুই ম্যাচ জিতে নেওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে সফরকারীরা।
যদিও শুরুতে ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিল আফগানিস্তান। বলা ভালো ফজলহক ফারুকী। এই পেসারের সামনে নড়বড়ে শুরু পায় বাংলাদেশ। যদিও বিপদ বাড়তে দেননি লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। দারুণ ব্যাটিংয়ের পর সাকিব ফিরে গেলেও জয়ের পথ গড়ে দিয়ে গেছেন। সেই পথ ধরে এগিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন লিটন ও তাওহিদ হৃদয়।
তামিম ইকবাল নেই। সেই সুযোগে আবারও একাদশের তালা খোলে নাঈম শেখের। কিন্তু সুযোগটা আর কাজে লাগাতে পারলেন কই! শেষ ওয়ানডেতে রানের খাতাই তো খুলতে পারলেন না নাঈম।
তামিম ছুটিতে যাওয়ায় একাদশে সুযোগ মেলে নাঈমের। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাও ৯ রান করেছিলেন, শেষ ম্যাচে তো কিছুই করতে পারলেন না। অল্প রানের লক্ষ্যে টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে বাঁহাতি ব্যাটার পারেননি। ফজলহক ফারুকীর বলে ভেঙে পড়ে তার প্রতিরোধ। বোল্ড হওয়ার আগে ৮ বল করলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি নাঈম।
এই ওপেনারের বিদায়ের পর মাঠে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই সিরিজে নিজের ছায়া হয়ে থাকা শান্তর খোলস ভাঙার সুযোগ ছিল। কিন্তু পারেননি। আরেকবার হতাশায় ডুবিয়ে দলকে বিপদে ফেলে গেছেন।
এই আফগানিস্তানের বিপক্ষেই একমাত্র টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন শান্ত। সেই তিনিই ফরম্যাট বদলে সাদা বল হতেই বিবর্ণ। ফজলহকের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে করতে পারেন মাত্র ১১ রান। ১৫ বলের ইনিংসে আছে দুটি চারের মার। আগের দুই ম্যাচে শান্ত ইনিংস দুটি ছিল যথাক্রমে ১২ ও ১।
২৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে পথে ফেরান অধিনায়ক লিটন দাস ও সাকিব। তাদের চমৎকার ব্যাটিংয়ে ঘুরতে থাকে রানের চাকা। তৃতীয় উইকেটে তারা গড়েন ৬১ বলে ৬১ রানের জুটি।
সাকিবের বিদায়ে বিচ্ছিন্ন হয় এই জুটি। মোহাম্মদ নবির বলে আউট হওয়ার আগে সাকিব খেলেন ৩৯ রানের ইনিংস। ৩৯ বলের ইনিংসটি বাঁহাতি ব্যাটার সাজান ৫ বাউন্ডারিতে।
বাকি কাজটুকু সেরেছেন লিটন ও হৃদয়। দারুণ ব্যাটিংয়ে লিটন পেয়েছেন হাফসেঞ্চুরি। ম্যাচ জেতানোর পথে খেলেছেন হার না মানা ৫৩ রানের ইনিংস। ৬০ বলের ইনিংসে মেরেছেন ৩ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কা। অন্যদিকে হৃদয় ১৯ বলে করেছেন অপরাজিত ২২ রান।
আফগানদের সবচেয়ে সফল বোলার ফজলহক। এই পেসার ২৬ রানে নেন ২ উইকেট। আর একটি উইকেট পেয়েছেন নবি।
ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন শরীফুল ইসলাম। বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার ২১ রানে পেয়েছেন ৪ উইকেট। আর সিরিজসেরা হয়েছেন আফগানিস্তানের পেসার ফজলহক ফারুকী। তিন ম্যাচে তার শিকার ৮ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৪৫.২ ওভারে ১২৬ (ওমরজাই ৫৬, হাশমতউল্লাহ ২২, মুজিব ১১, গুরবাজ ৬; শরীফুল ৪/২১, তাসকিন ২/২৩, তাইজুল ২/৩৩, সাকিব ১/১৩, মিরাজ ১/৩৫)।
বাংলাদেশ: ২৩.৩ ওভারে ১২৯/৩ (লিটন ৫৩*, সাকিব ৩৯, হৃদয় ২২*, শান্ত ১১, নাঈম ০; ফজলহক ২/২৬, নবি ১/৭)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ আফগানিস্তান ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: শরীফুল ইসলাম।
সিরিজসেরা: ফজলহক ফারুকী।