বিশিষ্ট রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুর রাজ্জাক এর জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে শরিয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইমামউদ্দিন এবং মাতা বেগম আকফাতুন্নেসা। আবদুর রাজ্জাক ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ডামুড্যা মুসলিম হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে বিএ (অনার্স) এবং পরে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।
আবদুর রাজ্জাক ছাত্রাবস্থায়ই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের (যা নিউক্লিয়াস নামে বহুল পরিচিত) তিন সদস্যের অন্যতম। এই পরিষদ ছিলো ছাত্রলীগের একটি প্রাগ্রসর প্রগতিবাদী অংশ যা ষাটের দশকের প্রথমদিকে একটি স্বাধীন জাতি গঠনের ধারণার উন্মেষ ঘটায়। তিনি ১৯৬০ থেকে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। আবদুর রাজ্জাক ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র ইউনিয়নের সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। আবদুর রাজ্জাক দুই মেয়াদে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ছয়দফা আন্দোলন, এগার দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর অন্যতম কমান্ডার ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। তিনি দেরাদুনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে আবদুর রাজ্জাক ছিলেন একজন জনপ্রিয় সংসদ সদস্য। তিনি দলীয় এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ কার্যকালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। আবদুর রাজ্জাক শরিয়তপুর-৩ আসন থেকে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক গঠিত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) সম্পাদক নিযুক্ত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আবদুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে পুনরায় বাকশাল গঠন করেন। আবদুর রাজ্জাক আশি ও নববইয়ের দশকের প্রথমদিকে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এরশাদের সামরিক শাসনামলে ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কারারুদ্ধ হন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে বাকশাল ও আওয়ামী লীগ একীভূত হলে আবদুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলে আবদুর রাজ্জাক। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।