আবাসন নীতি নিয়ে দ্বিমুখী ভূমিকায় চমেক প্রশাসন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

কলেজ থেকে পাস করে বের হয়ে গেলেই ছাড়তে হয় ছাত্রাবাস। এমন নিয়ম মেনেই কক্ষ ছেড়ে দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে এমন কঠোরতা উপেক্ষিত থাকে শুধু ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রদের ক্ষেত্রে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কক্ষ না ছাড়লে যেখানে 'কড়া' ভূমিকায় অবত্তীর্ণ হয় প্রশাসন; সেখানে ছাত্রলীগের কেউ হলে সে নিয়ম হয়ে যায় 'শিথিল'। প্রশাসনের এমন দ্বিমুখী ভূমিকার খেসারত দিতে হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) সাধারণ শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অনেক কক্ষ নিজেদের দখলে রেখে দেয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের কপালে জোটে না আসন।

অভিযোগ আছে, কিছু ছাত্র কলেজ থেকে পাস করে বের হয়ে গেছেন অনেক আগে। এর পর শুরু করেছেন ইন্টার্নশিপ। তবে এখনও ছাড়েননি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বরাদ্দ করা সেই কক্ষ। সে কক্ষ হেফাজতে রেখে ছাত্রাবাস ও ক্যাম্পাসে রাজত্ব করছেন দুই নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত কিছু ছাত্রলীগ নেতা। দীর্ঘদিন নিজেদের হেফাজতে থাকার সুবাদে বেশ কয়েকটি কক্ষকে নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহারের আস্তানা হিসেবে গড়ে তুলেছেন তাঁরা। প্রধান ছাত্রাবাসের বেশ কয়েকটি কক্ষে চলে মাদকের আসরও। গত ৮ ফেব্রুয়ারি চার শিক্ষার্থীকে তাঁদের রুম থেকে তুলে ছাত্রাবাসের দুটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার পর ছাত্রাবাসের ১৭/সি ও ১৯/এ- এই দুটি কক্ষে বেঁধে রেখে রাতভর টানা কয়েক ঘণ্টা নির্যাতন চালানো হয় চার শিক্ষার্থীকে। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্র ও তাঁদের পরিবার। চার ছাত্রের ওপর চালানো নির্মম নির্যাতন ও বর্বরতার পর 'বহিরাগতদের' কাছ থেকে কক্ষ উদ্ধারে মরিয়া কলেজ ও ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষ। এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেও নিয়েছে তারা। তবে এর আগেও কক্ষ উদ্ধারে প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ায় এবারও শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

গত দুই বছরে ছাত্রাবাসের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রধান দুই নেতার অনুসারীরা অন্তত ১০ বার জড়িয়েছেন হামলা, মারামারি ও সংঘর্ষে। এ কারণে একাধিকবার ছাত্রাবাস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় প্রশাসন। এতে প্রতিবারই বিপাকে পড়তে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

চার ছাত্রের ওপর চালানো নির্যাতনের ঘটনা চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেওয়ায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে দায়িত্বপ্রাপ্তদের। এ জন্য কলেজের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের নিয়ে এরই মধ্যে করা হয়েছে একাধিক জরুরি বৈঠক। ক্যাম্পাসের পড়ালেখার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবার আগে ছাত্রাবাসের সার্বিক বিষয় নিশ্চিত করার ওপর বৈঠকে গুরুত্ব আরোপ করেন সবাই। ছাত্রাবাসে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে এ জন্য দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে একটি শক্তিশালী পরিদর্শক দলকে। সব পক্ষের সমন্বয়ে কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে পরিচালনা করা হবে শুদ্ধি অভিযান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, নিয়ম ভেঙে বেশ কিছু কক্ষ দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকার অভিযোগ পেয়েছি আমরা। এ জন্য কোনো অবস্থাতেই ছাত্রাবাসে কোনো অনিয়ম চলতে দেবে না প্রশাসন।

প্রধান ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ও হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিজোয়ান রেহান বলেন, 'ছাত্রাবাসে কিছু কক্ষ দখলে থাকায় আমরা বেশ কয়েকজনকে নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তারপরও কক্ষ না ছাড়ায় তাদের ব্যাপারে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

চমেকে থাকা তিনটি ছাত্রাবাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন রয়েছে নগরের চটেশ্বরী সড়কে থাকা প্রধান ছাত্রাবাসে। এটির আসন সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫০০। এখানে মূলত দ্বিতীয় বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষের ছাত্ররা আসন পান। এ ছাড়া নাছিরাবাদ এলাকায় থাকা লুৎফুস সালাম ও হাফিজুল্লাহ বশির ছাত্রাবাসে মোট আসন সংখ্যা ৮০টি। এ দুই ছাত্রাবাসে প্রথম বর্ষের ছাত্ররা থাকার সুযোগ পান। বর্তমানে ছাত্রাবাসের ৭০ শতাংশের বেশি আসন চট্টগ্রামের সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরপন্থিদের দখলে রয়েছে। কিন্তু সেটি মানতে নারাজ প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীপন্থিরা। তাঁর মৃত্যুর পর মহিউদ্দিনের ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ পরিচিতি পায়।

সরেজমিন ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায়, চার ছাত্রকে নির্যাতনের ১০ দিন পরও ছাত্রাবাসজুড়ে নীরবতা বিরাজ করছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ছাত্রাবাসে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েকজন পুলিশ সদস্য। স্বাভাবিক সময়ের মতো এখন নেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের আড্ডা, হইহুল্লোড়। ছাত্রাবাসকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাবান্ধব পরিবেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আগে থেকে কক্ষ দখলমুক্তসহ নানা উদ্যোগ নিলে চার ছাত্রের ওপর বর্বরতার ঘটনা রোধ করা যেত বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁদের মতে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতোই নিয়ম অনুযায়ী কক্ষ ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রেও প্রশাসনকে 'কঠোর' হতে হবে। ছাত্রাবাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ছাত্রাবাসে দীর্ঘদিন ধরে কক্ষ দখলে রাখার কারণে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠেছে কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। তারা প্রধান দুই নেতার অনুসারী ও সংখ্যায় ৩০ থেকে ৪০ জন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035459995269775