বিশিষ্ট সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ এর জন্মদিন আজ। তিনি ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে ময়মনসিংহ জেলার ধানিখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুর রহিম ফরায়জী এবং মাতার নাম মীর জাহান বেগম। তিনি ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে নাসিরাবাদ মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর তিনি ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতা রিপন ল’ কলেজে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং বিএল পাস করেন। এ বছরেই তিনি ময়মনসিংহে আইনব্যবসা শুরু করেন এবং সেখানে তিনি ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তার পেশায় নিয়োজিত থাকেন।
আবুল মনসুর আহমদ একজন পেশাদার সাংবাদিক ছিলেন। তিনি যে সকল সাময়িক পত্রিকায় কাজ করেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সোলতান, মোহাম্মদী, দি মুসলমান, কৃষক, নবযুগ ও ইত্তেহাদ। তিনি ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে নবযুগ পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে চাকরি লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতিতেও আবুল মনসুর আহমদ এর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তার রাজনৈতিক জীবন খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হলেও তিনি এ আন্দোলনের বাস্তবতা সম্পর্কে বেশ সন্দিহান ছিলেন।
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে আবুল মনসুর আহমদ আওয়ামী মুসলিম লীগ দল প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আওয়ামী মুসলিম লীগের সহ সভাপতি ছিলেন। তিনি যুক্তফ্রন্ট এর নির্বাচনী কর্মসূচি ২১-দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। তিনি ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ফজলুল হক মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
আবুল মনসুর আহমদ ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যদের ভোটে পাকিস্তান গণপরিষদ এর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ খ্রিষ্টাব্দে বণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তিনি কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। এরপর তিনি রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
আবুল মনসুর আহমদ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকলেও বিদ্রুপাত্মক রচনার লেখক হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত। তার বিখ্যাত বিদ্রুপাত্মক রচনা হচ্ছে: ‘আয়না’ ও ‘ফুড কনফারে’ন্স । তার রচিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে, ‘সত্যমিথ্যা’, ‘জীবন ক্ষুধা’) ও ‘আবে-হায়াৎ’। আর স্মৃতিকথা, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, শের-ই-বাংলা থেকে বঙ্গবন্ধু এবং তার আত্মচরিত হল আত্মকথা। সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পদক ও নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মার্চ আবুল মনসুর আহমদ মৃত্যুবরণ করেন।