আমতলী সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি |

বরগুনার আমতলী সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নেই, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়েই চলছে কার্যক্রম। শিক্ষক সংকট চরমে। শিক্ষক সংকট থাকায় কলেজের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। ২২ বিষয়ের ৮ বিষয়ে শিক্ষক নেই। ৮ বিষয়ের শিক্ষক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। কলেজে অধ্যক্ষ, শিক্ষক, কর্মচারী ও অফিস সহায়কসহ ৪৪ জনের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২২ জন। অর্ধেক পদ অর্থাৎ ২২ জনের পদ শূন্য। অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও কর্মচারী  চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও  কলেজের কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। দ্রুত অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও কর্মচারী পদায়ন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে আমতলী উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে শিক্ষানুরাগী সাবেক এমপিএ মো. মফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে অল্প শিক্ষার্থী দিয়ে কলেজের পাঠদান শুরু হলেও দিন দিন প্রসার ঘটতে থাকে কলেজের। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৭ এপ্রিল কলেজটিকে সরকারি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারিকরণ হওয়ার পরপরই শিক্ষকরা অবসরে যান। ওই সময় থেকেই শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে কলেজটি চরম শিক্ষক সংকট রয়েছে। বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগে কলেজে স্নাতক, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুই হাজার ৭৩৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজের ২২ টি বিষয়ের পাঠদান হয়। সরকারিকরণের পর থেকে এ ২২ বিষয়ের মধ্যে ৮ টি বিষয়ের শিক্ষক অবসরে যান। শিক্ষক না থাকায় ৮ বিষয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবশ্যিক বিষয় বাংলার শিক্ষক মোসা. রেহেনা খানম ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে অবসরে  গেছেন। ওই সময়ে থেকে এ বিষয়ের শিক্ষক নেই। গত বছর ১ অক্টোবর আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার অবসরে যান। এক বছর ধরে আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক পদ শূন্য। গত ১৫ বছর ধরে ফিন্যান্স ও মার্কেটিং বিষয়ের শিক্ষক নেই। ২০১৯  খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইসলামের ইতিহাস, ইতিহাস, অর্থনীতি, পৌরনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষক নেই। লাইব্রেরিয়ান ও শারীরিক শিক্ষক নেই দীর্ঘদিন ধরে। তিনজন কারণিকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন একজন। ৫ জন প্রদর্শকের বিপরীতে আছে দুইজন। ১১ জনের অফিস সহায়ক পদে কর্মরত আছে মাত্র ৫ জন। ৬ জনের পদ শূন্য। এদিকে গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মজিবুর রহমান অবসরে যান। বর্তমানে কলেজটিতে অধ্যক্ষ পদও শূন্য। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে কলেজের কার্যক্রম। সরকারিকরণের পর থেকে পর্যায়ক্রমে শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করছে। 

গত ছয় বছর ধরে শিক্ষক অবসরে গেলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক পদায়ন দিচ্ছেন না বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আক্ষেপ জানান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হোসেন আহম্মেদ। এতে পাঠদান বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দ্রুত অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও কর্মচারী দেয়ার দাবী জানিয়েছেন কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমতলী সরকারি কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হওয়া মানে শিক্ষা জীবনকে বিপদে ঠেলে দেয়া। দীর্ঘদিন ধরে ওই বিভাগে ফিন্যান্স ও মার্কেটিং বিষয়ের শিক্ষক নেই।  

ইতিহাস বিষয়ের ছাত্র সাইফুল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষক না থাকায় ক্লাস হচ্ছে না। এতে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছি। দ্রুত শিক্ষক পদায়ন দেয়ার দাবি জানান তিনি।

অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষক না থাকায় অর্থনীতি বিষয়ের ক্লাস হয় না। এমন একটি জটিল বিষয়ে শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা চরম বিপদে আছেন।

শিক্ষার্থী নাঈম, ইমরান ও হাবিবা সুলতান রুম্মান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কলেজে আবশ্যিক বিষয় বাংলা, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক নেই। এতে আমরা পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। দ্রুত কলেজে আবশ্যিক বিষয়সহ সব বিষয়ের শিক্ষক দেয়ার দাবি জানান তারা। 

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হোসেন আহম্মেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কলেজের ২২ টি বিষয়ের ৮ টি বিষয়ের শিক্ষক নেই। অবসরে যাওয়ার পর থেকে ৮ বিষয়ের শিক্ষক পদ শূন্য। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে শিক্ষক চেয়ে আবেদন করেছি কিন্তু পাচ্ছি না। শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, কারণিক ও অফিস সহায়কসহ ৪৪ জনের পদ রয়েছে। কিন্তু কর্মরত আছে মাত্র ২২ জন। ২২ জনের পদ শূন্য রয়েছে। চাহিদামত শিক্ষক, কারণিক ও অফিস সহায়ক না থাকায় কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050621032714844