আমদা চালায় অবৈধ ‘ওয়েস্ট কোস্ট ইউনিভার্সিটি’, কর্তৃপক্ষ নির্বিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মালয়েশিয়া ও পানামার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অবৈধভাবে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ওয়েস্ট কোস্ট ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি (ডব্লিউসিআইএমটি) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বিদেশী প্রতিষ্ঠানের নামে বিবিএ, এমবিএ ও বিএসসিসহ স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিভিন্ন ডিগ্রির সনদ দিচ্ছে এ ইনস্টিটিউট। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোনো অনুমোদনই নেয়নি ডব্লিউসিআইএমটি। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রকাশিত ইউজিসির কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কথিত ওয়েস্ট কোস্ট ইউনিভার্সিটির নাম রয়েছে। বর্তমানে আমদা ইনস্টিটিউট নামের আড়ালো জামাতপন্থী কয়েকজন ব্যক্তি এইসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, মালিকপক্ষ আর সনদদানকারী প্রতিষ্ঠানের নামের মধ্যে জালিয়াতি ও প্রতারণা রয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। কথিত কারিগরি শিক্ষা  প্রতিষ্ঠান চালায় আমদা। ওয়েস্ট কোস্ট নামে কথিত বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা যে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছিলে কয়েকবছর আগে তার প্রমাণ দৈনিক শিক্ষার হাতে রয়েছে।  

রাজধানীর রামপুরার হাজীপাড়া এলাকায় আজিজ কমপ্লেক্স নামে একটি ভবনেই পরিচালিত বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় দুটি হলো ওপেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া ও ওয়েস্ট কোস্ট ইউনিভার্সিটি পানামা। এর মধ্যে ওয়েস্ট কোস্ট ইউনিভার্সিটি পানামার কার্যক্রম বন্ধের জন্য ২০০৭ সালে ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি বলছে, বিদেশী কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার আগে মন্ত্রণালয় ও কমিশন থেকে অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরকারের অনুমতি না নিয়ে বিদেশী কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও সনদ প্রদান সম্পূর্ণ অবৈধ।

ইউজিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, আইন অনুযায়ী দেশের মধ্যে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যেকোনো উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকার ও কমিশনের অনুমোদন নিতে হয়। অনুমোদন ছাড়া কোনো দেশী বা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও সনদ প্রদান সম্পূর্ণ অবৈধ। যদিও একটি চক্র বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে স্টাডি সেন্টার ও শাখা ক্যাম্পাসসহ নামে-বেনামে অবৈধ কার্যক্রম চালাচ্ছে। এমনকি সনদও প্রদান করছে। আমাদের কাছে বিভিন্ন সময় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের নামে অভিযোগ এলে আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্তমানে এ ধরনের অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করে একটি তালিকা প্রণয়নের কাজ চলমান।

ডব্লিউসিআইএমটির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানটিতে ওপেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার অধীনে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ব্যাচেলর অব ইনফরমেশন টেকনোলজি নামে দুটি প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়। এছাড়া ওয়েস্ট কোস্ট ইউনিভার্সিটি পানামার অধীনে এমবিএ, বিএসসি, এমএসসিসহ বিভিন্ন প্রফেশনাল প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বাণীও প্রচার করা হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের সামনের দিকে ওপেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার নামে বড় একটি ব্যানার টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। আর ভবনের সিঁড়িতে রয়েছে ওয়েস্ট কোস্ট ইউনিভার্সিটি পানামার নাম। ডব্লিউসিআইএমটি কার্যালয়ে ভর্তিবিষয়ক এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। ওই কর্মকর্তা জানান, দেশে বসেই একজন শিক্ষার্থীকে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপ্রাপ্তির সুযোগ করে দিচ্ছে ডব্লিউসিআইএমটি। দুটি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত প্রোগ্রামগুলোর পাঠদান অনলাইনে চলমান।

ডব্লিউসিআইএমটি কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে, বৈধভাবেই শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছেন তারা। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় নয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোম্পানি আইনে পরিচালিত হয় ডব্লিউসিআইএমটি। আমরা সরকারকে সব ধরনের রাজস্ব প্রদান করি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ওয়েস্ট কোস্ট

ইউনিভার্সিটি পানামার অধীনে যেসব প্রোগ্রাম পরিচালনা করছি, সেগুলো সবই প্রফেশনাল ডিগ্রি। এটা এক ধরনের নন-ফরমাল এডুকেশন। এর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসির অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। আর আমরা ওপেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার নামে যে প্রোগ্রামগুলো চালাচ্ছি, সেগুলো রেগুলার। এগুলো সিবিএইচই (ক্রস বর্ডার হায়ার এডুকেশন) নীতিমালার অধীনে চলছে। আমরা ইউজিসিতে প্রোগ্রামের অনুমোদনের আবেদন করেছি। তবে এখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি।

এদিকে ওয়েস্ট কোস্ট ইউনিভার্সিটি পানামার কার্যক্রম বন্ধের জন্য ২০০৭ সালে ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই চিঠির আলোকে ব্যবস্থাও নিয়েছিল ইউজিসি। যদিও এরপর পুনরায় অবৈধভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আইন অনুযায়ী বিদেশী এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা নিঃসন্দেহে অবৈধ। এ ধরনের আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের তথ্য আমরা পেয়েছি। শিগগিরই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এর আগেও কমিশন এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সতর্কতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023689270019531