মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেছেন, আমরা ঝাড়ুদার তৈরির উচ্চশিক্ষা চাই না, আমরা চাই মানসম্মত শিক্ষা।
তিনি বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে কিছু পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। সেই পরিচ্ছন্নতা কর্মীর একটি পদ হচ্ছে ‘ঝাড়ুদার’। সেই ঝাড়ুদার পদে হাজার-হাজার, লাখ-লাখ আবেদন পড়েছে। এর মধ্যে কত জন যে অনার্স-মাস্টার্স পাস! আমরা কি ঝাড়ুদারের শিক্ষক হবো? এদের না আছে মান, এরা না পারে নিজের নামটি লিখতে, ইংরেজির ক্যাপিটাল লেটার-স্মল লেটার তাদের শেখাতে হয়। আমরা এই মানের শিক্ষা চাই না, আমরা চাই মানসম্মত শিক্ষিত।
গত শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তেজগাঁও মহিলা কলেজের সূবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, আমাদের মতো দেশে এত উচ্চ শিক্ষিত বানিয়ে আমরা কি ঝাড়ুদারের চাকরি দেয়ার জন্য সুশিক্ষিত বানাবো? এটাই বাস্তবতা! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন মানসম্মত শিক্ষার দিকে জোর দিচ্ছেন। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করলে আমরা দেখবো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক ভিড়, আর কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভবন আছে, শিক্ষক আছে, কিন্তু ছাত্র নেই।
ঢাকা কলেজের প্রসঙ্গ টেনে কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদ বলেন, ঢাকা কলেজে এক সময় অনার্স-মাস্টার্স-ইন্টারমিডিয়েট মিলে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী ছিলো। ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আমরা যে মানসম্মত শিক্ষা চাই সেটি নিশ্চিত সম্ভব হয়নি, আর সেটি হবেও না কোনোদিন। শিক্ষার মানের কথা বিবেচনা করে কয়েক বছরে সেটি কমিয়ে এনে ১৪ হাজার করা হয়েছিলো। শিক্ষার মানের জন্য নূন্যতম একটা স্ট্যান্ডার্ড থাকতে হবে।
মহাপরিচালক আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের এনরোলমেন্ট করার চেষ্টা করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকালে আমাদের সেই এনরোলমেন্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমাদের বিশাল অর্জন রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার মান আমরা কতটুক অর্জন করতে পেরেছি? অনেক শিক্ষার্থী দিয়ে শিক্ষার মান হয় না! এক সত্য কথা হলো ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা সবার জন্য না। যারা শিক্ষকতা করবে, রিসার্চ করবে, তাদের উচ্চশিক্ষা দরকার আছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় যেতে একটি ডিগ্রি যথেষ্ট, মাস্টার্স পাসের প্রয়োজন নেই।
নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মহাপরিচালক বলেন, জাতির পিতা যেই স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখেছিলেন, ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই সোনার বাংলা আর গড়া হয়নি। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে সেই স্বপ্নের বাংলাদেশের পথে হাঁটছেন। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়ে শুরু করেছিলেন, এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের পথে আছি। ইনশাল্লাহ ২০৪১ এর মধ্যে আমরা উন্নত বাংলাদেশ গড়বো। আর এ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার মধ্য দিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়বো। সেই বিশ্বাস আর সেই প্রত্যয় আমাদের রয়েছে, সেই সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় হবে আমাদের এই নারী শিক্ষার্থীরা।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন নারীদের ঘরে বসিয়ে রেখে কখনোই দেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। আমরা নিশ্চয়ই ভবিষ্যতের আফগানিস্তান হবো না। নিশ্চয়ই আমাদের নারী ছাত্রীদের ঘরে মধ্যে আবদ্ধ করে রাখবো না। আজকে যদি আমরা আফগানিস্তানের কথা চিন্তা করি, তাহলে দেখবো নারীরা ঘর থেকে বের হতে পারে না, যারা চাকরি করতো তাদেরকে বরখাস্ত করে দিয়েছে। আমরা কি সেই ধরনের বাংলাদেশ চাই? যদি না চাই, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের অনেকজন আছে যারা আমাদের দেশকে আফগানিস্তান বানাতে চায় এবং আমাদের চিন্তা চেতনা, ভাবনায়, ঘরে মধ্যে প্রবেশ করে সেই ধারণা প্রবেশ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। যার প্রভাব আমাদের সংস্কৃতিতে পড়ছে। কাজেই আমাদের ছাত্রীরা, যারা ভবিষ্যতের মা, তাদের সতর্ক থাকতে হবে।
এসময় অন্যান্যদের বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান, তেজগাঁও মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আসাদুল হক, তেজগাও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রশিদ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক জিল্লু, কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও উপাধ্যক্ষ হাজেরা পারভীন।