শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত অপরিকল্পিত, যার ফলে শিক্ষিত বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়নি।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, আজকের এই অনুষ্ঠানটি শিক্ষকদের সম্মান জানানোর জন্য। আমি নিজেও একজন শিক্ষক, তাই এই দায়িত্ব স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছি। শিক্ষার প্রতি আমার দায়িত্ববোধ সবসময়ই ছিল। তবে, শিক্ষকদের অনেক বড় বড় দাবি দাওয়া আমি তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ করতে পারিনি বলে নিজেকে অপরাধী মনে হয়।
শিক্ষা উপদেষ্টা বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকেরা সব থেকে বেশি অবহেলিত। স্বল্প আয়ের কারণে তাদের পেশাগত মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়।
আরো পড়ুন:শিক্ষকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন শিক্ষা উপদেষ্টা
তিনি অভিযোগ করেন, বেসরকারি স্কুল ও কলেজের পরিচালনা বোর্ডে অপরাজনীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। এ কারণে নিয়োগ পদ্ধতিতে গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যোগ্যতা নির্ধারণের মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকায় চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
আরো পড়ুন: শিক্ষার সব স্তরে নিয়োগ বাণিজ্য ছড়িয়ে গেছে: শিক্ষা উপদেষ্টা
শিক্ষকদের নৈতিক দায়িত্বের ওপর জোর দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষক হিসেবে আমাদের উচিত ছাত্রছাত্রীদের সাথে দরদ দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করা। তাদের স্কুলে উপস্থিতি ও অন্যান্য সমস্যার প্রতি নজর দেয়া শিক্ষকদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। শিক্ষকদের আন্তরিক মনোভাবেই অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সরকারি রাজস্ব আয় আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় খুবই কম। এ কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবে সরকারি ব্যয়ে দুর্নীতি কমাতে পারলে এ খাতগুলোতে ব্যয় বাড়ানো সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন: মাধ্যমিক শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত: শিক্ষা উপদেষ্টা
শিক্ষাক্রমের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, নতুন দেশ গড়ার প্রেক্ষাপট স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি, তবে দ্রুত সময়ে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করতে গিয়ে তা করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে অবশ্যই এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফয়েজ এবং ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের প্রধান ড. সুসান ভাইজ।