দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক: ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে বাতিল হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক হওয়ার পর থেকেই দেশে-বিদেশে খাদিজার মুক্তির সোচ্চার দাবি ছিল৷
তার মুক্তি চেয়ে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একাধিকবার আহ্বান জানিছে৷ পথে নেমেছিল তার সহপাঠী থেকে শুরু করে দেশের অগণিত মানুষ৷ কারাগারে কেমন ছিলেন খাদিজা, সামনে দিনগুলোতে তিনি কি করতে চান এ বিষয়ে ডয়চে ভেলে বাংলার সাথে কথা বলেছেন খাদিজাতুল কুবরা৷
খাদিজা, আপনি কেমন আছেন?
খাদিজাতুল কুবরা: জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ৷ সুস্থ আছি কিন্তু শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল এবং অনেক ধরনের সমস্যা আছে৷ সেটার জন্য ডাক্তার দেখাতে হবে৷ আমার ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন আছে৷ আমিতো আগে থেকেই অসুস্থ ছিলাম৷ কারাগারেতো আর ওইরকমভাবে কোনো ট্রিটমেন্ট আমি করাতে পারিনি৷ কিডনিতে স্টোন ছিল৷ এখন কি পরিস্থিতি, সেটাও আমি জানি না৷
পরীক্ষা ছিল, পরীক্ষা কেমন হয়েছে?
আমি যখন কারাগারে, তখন কোর্ট পারমিশন দেওয়ায় আমি কিছু পড়ালেখা করেছিলাম৷ তবে আমি আসলে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না যে আমি হয়তো এই পরীক্ষাটা দিতে পারব৷ কিন্তু যেতে পেরেছি, পরীক্ষা দিয়েছি৷ মোটামুটি ভালো হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ৷ আমার পরের পরীক্ষা ২৫ নভেম্বর৷
আপনি কোন ইয়ারের পরীক্ষা দিলেন?
এটা সেকেন্ড ইয়ার সেকেন্ড সেমিস্টার, সব মিলিয়ে চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষা৷
আপনি কি আগের পরীক্ষাগুলো দিতে পেরেছিলেন?
জ্বি জ্বি৷ আমি থার্ড সেমিস্টার (তৃতীয় সেমিস্টার) শেষ করে দেড়-দুই মাস ক্লাস করে তারপর গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাই৷
আপনি যখন কারাগারে ছিলেন, এটাতো খুবই কঠিন সময়৷ আপনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী৷ একটা উচ্ছ্বল সময় আপনি পার করছিলেন ক্যাম্পাসে৷ তারপরে আপনাকে অন্তরীণ থাকতে হলো ১৫ মাস৷ আপনার এই সময় নিয়ে, কারাগারের জীবন নিয়ে আপনি আমাদের কিছু বলতে পারেন?
আমি কারাগার জীবনটা আমার মাইন্ড থেকে টোটালি বের করে দিয়েছি৷ এই জিনিসটা ভাবলেই কেমন জানি লাগে৷ আমি ভাবতে চাই, আমার লাইফে আসলে কারাগারের কোনো অধ্যায় ছিল না৷ আমি ওইটা নিয়ে আসলে কিচ্ছু মনেও করতে চাচ্ছি না৷ আমি দুঃখিত, এই বিষয়টি আমি চিন্তাও করতে চাই না৷
ছোট্ট করে জানতে চাই, আপনার পড়াশোনার কেমন ক্ষতি হলো এই ১৫ মাসে বা আপনি আপনার শিক্ষা জীবন নিয়ে কি ভাবছেন?
১৫ মাসের মধ্যে একটা বছর চলে গেছে৷ এখনতো এই সেমিস্টার ফাইনাল দিচ্ছি৷ এখন ৩০ তারিখে আদালতের রায়ের পর সিদ্ধান্ত নিব, জীবনে কি করব৷ আমার জীবনের সব সিদ্ধান্ততো এখন কোর্টের কাছে৷
আপনি বাড়িতে ফিরে কি করলেন আপনার মা-বাবা, পরিবারের অন্য সদস্য সবাই নিশ্চিয় আনন্দিত ছিলেন?
সবাই আসলো৷ সবাই অনেক খুশি৷ সবাই আসতেছে, মানে আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি৷ সবাই কথা বলতেছে৷ মানে অন্যরকম৷ সবাই আসতেছে, পাড়া-প্রতিবেশিরা৷ মা অনেক খুশি৷ মায়ের টেনশন শেষ৷
এই পরিবারের যে জার্নি কঠিন সময় পার করার, তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ছিল কোন সময়টা, আপনি একটু আমাদের শেয়ার করতে পারেন৷ আমি পরিবারের কথা বলছি?
আমিতো আসলে ছিলাম না৷ এটা তারাই ভালো করে বলতে পারবে কখন৷ আমি যতটা জানি, তারা সব সময় খারাপই ছিলেন৷
আপনি যখন কারাগারে ছিলেন, তখন কি আপনি জানতে পারতেন যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, অনেকেই আপনার জন্য প্রতিবাদ করেছে৷ অনেক অজানা মানুষ আপনার জন্য কলম ধরেছে৷ সমবেদনা জানিয়েছে৷ আপনার জন্য লিখেছে৷ এই বিষয়টা কারগার থেকে আপনি জানতে পারতেন, বা কোনো আইনজীবী আপনাকে জানাতো?
আসলে এই বিষয়গুলো হয়তো আপু কখনও বলতো৷ এইগুলো আপুমনি সবকিছু হ্যান্ডেল করতো৷
আপনি আপনার শিক্ষা জীবন, ভবিষ্যত নিয়ে কিছু একটা বলতে পারেন, আপনি কি চিন্তা করছেন?
আমার মাথায় এখন একটা টেনশন ঘুরতেছে যে, শেষ পর্যন্ত আমার বিচার কি হবে৷
দেড় বছর পর আপনি আবার মুক্ত জীবনে৷ এই অনুভূতিটা কেমন, আপনি কেমন বোধ করছেন?
আমার এখনও মনে হচ্ছে আমি ঘোরের মধ্যে আছি৷ আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না, আমি বাইরে৷
খাদিজা, আপনি কি কিছু কিছু বলতে চান৷ আমি প্রশ্ন করছি না৷
এই ১৫ মাসে আমার একটা রিয়েলাইজেশনই ছিল, লাইফে ফ্যামিলি অনেক ইমপর্ট্যান্ট৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে