আসন ফাঁকা ভর্তিচ্ছু পাচ্ছে না ঢাবির চার বিভাগ

ঢাবি প্রতিনিধি |

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের প্রায়োগিক বিষয়গুলোতে আসন বাড়ানো ও মৌলিক বিষয়গুলোতে আসন কমানো বা অপরিবর্তিত রেখে ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় (ঢাবি) প্রশাসন। সবচেয়ে বেশি আসন কলা অনুষদে কমলেও বরাদ্দকৃত কিছু বিষয়ের  আসনে শিক্ষার্থী পাচ্ছেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ। নতুন বরাদ্দকৃত আসন ও  যুগের তুলনায় বেশি বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিবিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা থেকে জানা যায়, ২০২২-২৩ সেশনের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ভর্তি প্রোগ্রামে সবচেয়ে বেশি খালি আসন রয়েছে কলা অনুষদের সংষ্কৃত বিভাগ, উর্দু বিভাগ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এবং পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ। কয়েক দফায় বিষয় মনোনয়ন প্রকাশ করেও আসন পূরণ করতে পারছেনা বিভাগগুলো।  

কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৫১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হননি। প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এই ইউনিটে মানবিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩৮ জন, বিজ্ঞানের ৮৫ এবং ব্যবসায় শিক্ষার ২৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হননি।

কলা ইউনিটে সর্বোচ্চ ৪২টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হননি উর্দু বিভাগে। পাশাপাশি ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২৪, সংস্কৃত বিভাগে ৩৮টি এবং পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে ২৪টি আসনে মনোনয়ন পেয়েও শিক্ষার্থীরা ভর্তি হননি। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে নতুন ভর্তি নীতিমালায়  ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে ২৫টি আসন কমিয়ে ১০০ থেকে ৭৫টি, উর্দুতে ৪০টি আসন কমিয়ে ১১০ থেকে ৭০টি, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজে ৪০টি আসন কমিয়ে  ৯০ থেকে ৫০টি, সংস্কৃতে ২৫টি কমে ১৬০ থেকে ১৩৫টি করা হয়।

বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,  বিশ্বের নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এসব ভাষাভিত্তিক বিষয়ের চাহিদা থাকলেও  বাংলাদেশে এসব বিষয়ের আলাদা তেমন কোন চাকরির ক্ষেত্র নেই।

জানা যায়, উর্দু-ফারসি-সংস্কৃত-পালি বিভাগের সূচনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন এইসব বিভাগের দরকার থাকলেও কালের পরিবর্তনে এ বিষয়গুলোর ব্যবহারিক চাহিদা তুলনামূলক কমে গিয়েছে । তার প্রভাব পড়েছে নতুন করে এসব বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে। 

বিভাগগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে চাকরিপ্রত্যাশী ১১ জন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে প্রার্থীরা সংস্কৃত পড়তে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খান। অথচ নিয়োগ পেলে শিক্ষার্থীদের এই ভাষাই শেখানোর কথা ছিল। 

জানতে চাইলে সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদার কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার পেছনে কোনো কারণ নেই। সেকেন্ড কলে ভর্তি হয়নি থার্ড কলে ভর্তি হবে। এই সপ্তাহে মিটিং আছে তার পরে কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি হবে।

উর্দু বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি এমন না যে শিক্ষার্থীরা আমাদের বিভাগগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এবারের ভর্তি প্রক্রিয়াটা একটু ধীরগতি সম্পন্ন। যারা অন্য কোথাও ভর্তি হয়েছে সেই ফাকা আসনে মাইগ্রেশন চালু হতে সময় লাগছে। এই সপ্তাহে মিটিং-এ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এবার যাদের নাম ওয়েটিং লিস্টে আসবে তারা আমাদের বিভাগগুলোতে ভর্তি হবে বলে আমি আশাবাদী। 

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাসির বলেন, যেহেতু আমরা সবার আগে পরীক্ষা নিয়েছি এরপরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুচ্ছ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আপনি দেখবেন বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে আসন খালি নেই। সে হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের যে বিষয়ে মনোনয়ন দিয়েছি তারা হয়তো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের পছন্দের বিষয়গুলো পেয়ে সেখানেই ভর্তি হয়েছে। ফলে আসনগুলো আপাতত ফাঁকা রয়েছে। তবে আমরা মাইগ্রেশন চালু করেছি এবং দ্রুতই সেগুলো পূরণ হয়ে যাবে। উক্ত বিষয়গুলোতে আরও কিছু আসন কমানো উচিত কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিট কমানো বা বাড়ানোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকদের কাজ। আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এটার মূল কারণ হতে পারে শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে চাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া বিষয়ভিত্তিক জীবনমুখী শিক্ষা ও তার প্রায়োগিক দিক বৃদ্ধি পাওয়াও একটা কারণ হতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে দেশে বিষয়ভিত্তিক ক্ষেত্র সৃষ্টি ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকায় হয়তো তারা অন্য কোথাও ভালো বিষয়গুলো বেছে নিচ্ছে। এটা শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন সূচক বলে আমি মনে করি। তবে তিনি সিট কমানোর বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002953052520752