সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী। শুক্রবার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে ইরান ইন্টারন্যাশনাল।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, সম্প্রতি ইরানের উত্তরাঞ্চল সফর করে আসার পরই আহমাদিনেজাদের ওপর ওই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন সমালোচক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন এবং প্রতিষ্ঠা বিরোধী মতামত প্রকাশ করছেন।
২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পর পর দুই মেয়াদে ইরানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। এই সময়ের মধ্যে তিনি দেশ ও দেশের বাইরেও বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁকে আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি খামেনির আজ্ঞাবাহী ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল।
সম্প্রতি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার পর আগামী ২৮ জুন দেশটিতে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়। এই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ। কিন্তু গার্ডিয়ান কাউন্সিল তাঁর নিবন্ধন বাতিল করে দেয়। এর আগে ২০১৭ ও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনেও একই পদ্ধতিতে আহমাদিনেজাদকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে দেয়া হয়নি।
ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল এবারের প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে গত ১১ জুন এক ‘খবর ফোরি নিউজ’ নামে একটি সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন আহমাদিনেজাদ। এই সাক্ষাৎকারে তিনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির বিদেশনীতির সমালোচনা করেছিলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘আমরা আর কত দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে থাকব?’
পাশাপাশি তিনি ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ইসলামি বিপ্লবের পর রাজধানী তেহরানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে হামলা ও দখলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা নষ্ট করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন। আর ওই ঘটনার জন্য কিছু ‘কিছু লোক’ জড়িত বলেও উল্লেখ করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন—নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলেও আহমাদিনেজাদকে যে সেই সুযোগ দেয়া হবে না, তা শুরু থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। অনেকেই বিশ্বাস করেন, বাতিল হওয়ার জন্যই তিনি প্রার্থিতার নিবন্ধন করেছিলেন। এর মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি যে প্রতিষ্ঠা বিরোধী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন সেই বিষয়টিকে আরও জোরালো করতে চেয়েছেন।
ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, গার্ডিয়ান কাউন্সিল দ্বারা অনুমোদন করা ইরানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশে আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদকে তেহরানের গ্র্যান্ড বাজারে কিছু জনসংযোগ করতে দেখা গিয়েছিল। তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ ও খবর প্রচার করা ‘দোলাতবাহার’ নামের এক্স অ্যাকাউন্টে গত ৭ জুনের পর আর কোনো পোস্ট দেখা যায়নি।