আয় না থাকলেও কর দিতে হবে দুই হাজার টাকা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

করযোগ্য আয় না থাকলেও আগামী বছর থেকে আয়কর দিতে হবে। রিটার্ন জমার স্লিপ বা প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পেতে শূন্য রিটার্ন জমা (করযোগ্য আয় না দেখিয়ে রিটার্ন জমা) দিলেও দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে।

কর অফিস থেকে রিটার্ন জমার স্লিপ না নিলে ৩৮ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা পাওয়া যাবে না। কর আদায় বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আসন্ন বাজেটে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) বাতিলের সুযোগ দেয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার ক্ষেত্রে পুরুষ করদাতার বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকা, মহিলা অথবা ৬৫ বছরের বেশি পুরুষ করদাতার ক্ষেত্রে সাড়ে তিন লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী করদাতার ক্ষেত্রে সাড়ে চার লাখ টাকা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার বার্ষিক আয় চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা করমুক্ত।

এ সীমার নিচে আয় থাকলে করদাতা এতদিন শুধু শূন্য আয় দেখিয়ে রিটার্ন জমা দিতে পারতেন, এ ক্ষেত্রে কোনো কর দিতে হতো না। বার্ষিক আয় করসীমার এক টাকার বেশি থাকলেও তাকে ন্যূনতম আয়কর দিতে হয়।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম করের হার পাঁচ হাজার টাকা। অন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম করের হার চার হাজার টাকা।

আর সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম করের হার তিন হাজার টাকা।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী বাজেটে কোনো ব্যক্তি শূন্য আয় দেখিয়ে রিটার্ন জমা দিলে স্লিপ পেতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। অন্যদিকে আয় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে নির্ধারিত হারে আয়কর দিতে হবে। বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এ প্রস্তাব দেওয়ার কথা রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, একজন গৃহিণীর ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র আছে। কিন্তু তার করযোগ্য আয় নেই। দুই বছর আগে ব্যাংকে টিআইএন দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন। চলতি অর্থবছরে টিআইএনের পরিবর্তে ব্যাংকে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়।

স্লিপ না দিলে সঞ্চয়পত্রের সুদ আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটার বিধান রয়েছে। আর স্লিপ জমা দিলে ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়। বাড়তি উৎসে কর কাটার হাত থেকে বাঁচতে চলতি অর্থবছরে ওই গৃহিণী শূন্য রিটার্ন জমা দিয়ে স্লিপ নিয়েছেন। কিন্তু আগামী অর্থবছর থেকে শূন্য রিটার্ন জমা দিলেও স্লিপ পেতে তাকে দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে।  

বর্তমানে ৩৮টি সরকারি-বেসরকারি সেবা পেতে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক। এগুলো হচ্ছে-ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকা বেশি ঋণ নিলে; কোম্পানি পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে; আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি-ইআরসি) নিতে; সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে; সমবায় সমিতি নিবন্ধন নিতে; বিমা কোম্পানির সার্ভেয়ার হতে; ১০ লাখ টাকা বেশি মূল্যের জমি-ফ্ল্যাটের দলিল করতে; ক্রেডিট কার্ড নিতে; পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ নিতে; ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র পেতে; গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে; ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বাচ্চা ভর্তি করতে; কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিতে; অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে; ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে; ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে; নির্বাচনে অংশ নিতে; সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১৬ হাজার টাকা হলে; এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ১৬ হাজার টাকার বেশি বেতন গ্রহণ করলে; পণ্য আমদানি-রপ্তানির বিল অফ এন্ট্রি জমা দিতে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক।

আগামী বাজেটে এর সঙ্গে আরও কয়েকটি সেবা যুক্ত হচ্ছে। আগে শুধু টিআইএন দিয়ে এসব সেবা নেয়া যেত। চলতি বাজেটে টিআইএনের পরিবর্তে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করে এনবিআর। 

এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, বর্তমানে এনবিআর শুধু তাদের কাছ থেকেই কর আদায় করছে, যারা কর দেয়। যারা দেয় না তাদের প্রশ্ন করা হচ্ছে না। এটা সমাজে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করছে। অনেকের করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন জমা দিচ্ছে না। তাদের করজালে আনতে এ উদ্যোগ যথাযথ। 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ বিধানের কারণে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সেবা পেতে যারা স্লিপের জন্য রিটার্ন জমা দেবেন, তারা নিশ্চয় সাধারণ মানুষ।

দুই হাজার টাকা কর দিতে গিয়ে তাদের পাঁচ হাজার টাকার হয়রানি হতে হবে। এ পদ্ধতি চালু করার আগে কর ব্যবস্থার অটোমেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে এ ধরনের করদাতার জন্য রিটার্ন ফরম সহজ করা উচিত। 

অন্যদিকে আগামী বাজেটে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) বাতিলের সুযোগ দেওয়া হবে। যেসব করদাতা কাজের প্রয়োজনে টিআইএন নিয়েছিলেন, তারা উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে টিআইএন বাতিলের আবেদন করতে পারবেন।

ফলে একবার টিআইএন নিয়ে প্রতি বছর আয়-ব্যয়ের বিবরণী জানিয়ে রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি মিলবে। প্রকৃত করদাতাদের ওপর নজর দিতে এ বিধান করতে যাচ্ছে এনবিআর। 

সূত্রগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে ৮৬ লাখ টিআইএনধারী রয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত রিটার্ন জমা দেয় ২৮ লাখ করদাতা। বাকি করদাতারা কেন রিটার্ন দিচ্ছে না তা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায় থেকে সমালোচনা শুনতে হয়।

অথচ অনেক করদাতা মৃত্যুবরণ করেছেন, অনেক করদাতা অবসরে গেছেন, অনেক ব্যক্তি-শিক্ষার্থী টিআইএন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন বা নিজ প্রয়োজনেও অনেকে টিআইএন নিয়েছেন।

এ ধরনের করদাতার কাছ থেকে রিটার্ন আশা করা অবাস্তব। তাই দুর্নাম ঘুচাতে আগামী বাজেটে টিআইএন বন্ধের বিধিমালা করা হচ্ছে। মূলত প্রকৃত করদাতাদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের পেছনে সময় ব্যয় করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026261806488037