বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও গণিতে দুর্বলতার খবর আগেই জানা ছিলো। এবার জানা গেলো খোদ ইংরেজি ভাষার দেশ ইংল্যান্ডেই ইংরেজিতে দুর্বলতা নিয়ে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তদের গণিতজ্ঞানও তথৈবচ। পৃথিবীর সর্বোচ্চ মানের শিক্ষাপদ্ধতি ও পরিষেবা সুবিধা পাওয়া দেশটির অন্তত ৪১ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষার্থী পঠন, লিখন, গণন যোগ্যতার প্রত্যাশিত মান ছাড়াই মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হচ্ছেন। এদের সংখ্যা ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের চেয়ে বর্তমানে অন্তত ৫০ হাজার বেশি।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থা তার সরকারের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা ব্যর্থ করবে। ব্রিটিশ সরকার ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ৯০ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে ন্যুনতম মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তা এখন সুদূর পরাহত হয়ে উঠেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর সোশ্যাল জাস্টিস এর হিসেব অনুযায়ী, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ৬ লাখ ৭১ হাজার প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪১ শতাংশ বা ২ লাখ ৭৫ হাজার– শিক্ষার্থী ইংরেজি ও গণিতে গ্রহণযোগ্য মান অর্জন না করেই প্রাথমিক স্তর উতরে গেছে।
গবেষকরা মনে করছেন, শিক্ষামানের এই ধসের পেছনে কোভিড অতিমারি অন্যতম প্রভাবক। বছরজুড়ে বাধ্যতামূলক ছুটি শিক্ষার্থীদের পাঠ ভুলিয়ে দিয়েছে। স্কুল খোলার পর পুরনো পাঠ নতুন করে দিতে হচ্ছে। এ কারণেই হয়তো মান উতরাতে না পারা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের চেয়ে এখন বেশি।
বচন ও যোগাযোগ বিষয়ক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘আই ক্যান’ এর সমীক্ষায় জানা গেছে, পুরো যুক্তরাজ্য জুড়ে অন্তত ১৫ লাখ শিশু ভাষা দক্ষতা ও কথাবলায় অনেক পিছিয়ে আছে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশটির মাত্র দুই-পঞ্চমাংশ শিক্ষক মনে করেন, তাদের শিক্ষার্থীরা ভিত্তি-বিষয় বা ফাউন্ডেশন সাবজেক্টগুলোতে প্রত্যাশিত মান অর্জন করতে পারবেন।
এই দুই-পঞ্চমাংশের মধ্যে দারিদ্রপ্রবণ এলাকাগুলোর ৩২ শতাংশ শিক্ষক বলেছেন তাদের ছাত্ররা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন। আর অভিজাত এলাকার স্কুলগুলোর ৫১ শতাংশ শিক্ষক তাদের ছাত্রদের নিয়ে আশাবাদী। তবে প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থা বদলাতে ‘আমূল পরিকল্পনা’ প্রয়োজন বলে বলা হয়েছে সিএসজে প্রতিবেদনে।
প্রতিষ্ঠানটি মন্ত্রিসভাকে শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্যে অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ কবার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে সিএসজের রিপোর্ট প্রণেতা অ্যালিস উইলকক মনে করেন, ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ৯০ শতাংশ শিশু পঠন, লিখন ও গণনে প্রত্যাশিত মান অর্জন করবে এমন ধারণা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। সরকার যদি শিক্ষার মান উন্নত করতে চায় তাহলে তাদের উচিত শিক্ষা সংস্কারের জন্য একটি সাহসী পরিকল্পনা নেয়া। সূত্র: গার্ডিয়ান