ইংরেজি ভাষা শিখন-শেখানোর অন্তরায়

ননী গোপাল সূত্রধর |

উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত 'The Tempest' নাটকে প্রসপেরো চাইতো ক্যালিবান যেন প্রসপেরোর ভাষায় কথা বলা শেখে। কিন্তু ক্যালিবান তার ভাষা শেখাতো দূরের কথা ক্যালিবান তার স্বভাবের কোন ইঞ্চি পরিমাণ পরিবর্তন করেনি!

"Caliban, therefore, remains at the end what he was at the beginning."

প্রসঙ্গত বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রভাব শুরু হয় সেই ইংরেজ শাসনামলে। সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা চেয়েছিলেন বাঙালিকে ইংরেজি শিখিয়ে-পড়িয়ে তাদের শাসন ব্যবস্থার ভিত মজবুত করবে - সেই চিন্তার গোড়ে বালি। বাঙালিরা ক্রীতদাসের জাতি নয় সেটার প্রমাণ যুগে যুগে পাই আমরা। কিন্তু তাদের শাসন আমল চিরস্থায়ী না করতে পারলেও ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ঔপনিবেশিকতার রাজত্ব আজও কমেনি বরং ইংরেজি একটি বৈশ্বিক বা সার্বজনীন ভাষায় পরিণত হয়েছে।

ইংরেজি শেখার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীতার কথা চিন্তা করেই বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি আবশ্যিক বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়।  দুঃখজনক হলেও সত্য,  আজো আমরা ও আমাদের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষা শেখা বা ভাষা অর্জনের ভিত শক্ত করতে পারিনি। তাই নিজের দায়বদ্ধতা ও নিবিড় উপলব্ধির খাতিরে  আজকে ইংরেজি ভাষা শিখন-শেখানোর অন্তরায় সমুহ  তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

এক. আমাদের দেশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা  ইংরেজি ভাষা যথাক্রমে শেখানো ও  শেখার ব্যর্থতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হল শিক্ষার উপযুক্ত পারস্পরিক শ্রেণি পরিবেশের (Interactive Class Atmosphere) অভাব। শিক্ষকের যোগ্যতা কোন মাপকাঠিতে বিবেচনা নাইবা করলাম কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যার সঙ্গে শিক্ষকের সংখ্যা আনুপাতিকহারে অতি নগণ্য।  শ্রেণি আকার অনেক বড় হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে সম্পন্ন করা যায় না দলীয় কাজ কিংবা একক  কাজ। এছাড়াও সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাড়ির কাজ আদায় করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, ইংরেজি ভাষা শিক্ষকদের কার্যকর প্রশিক্ষণের অভাব এবং প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞান প্রয়োগের ক্ষেত্র খুবই সীমিত।

দুই. শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে ব্যর্থ হবার আরেকটি কারণ হল আংশিক ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি। যেমন: ভাষার দক্ষতা অর্জনের জন্য লিসেনিং, স্পোকেন, রিডিং ও রাইটিং এই চারটি দক্ষতা অর্জন আবশ্যক। কিন্তু মূল্যায়নে শুধু দুটি দক্ষতার (রিডিং ও রাইটিং) পরীক্ষা হয়। সুতরাং শিক্ষার্থীরা উল্লেখিত দক্ষতায় ভালো নম্বর পাবার আশায় না বুঝে লিখিত অংশ (Composition) মুখস্ত করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। আর প্রশ্ন উত্তর ভুলে গেলে পরীক্ষার উত্তরপত্রে যা ইচ্ছা তা লিখে দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তারা না পারছে গতানুগতিক উত্তর লিখতে না পারছে সৃজনশীল লেখা লিখতে।

তিন. শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বা শ্রেণিকক্ষের বাইরে ইংরেজিতে শোনা, কথা বলা, পড়া এবং লেখার নিয়মিত  অনুশীলন করার অনীহা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা ইংরেজি পত্রিকা পড়া, ইংরেজি খবর শোনা, সিনেমা দেখা এর কোনো কিছুই স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করছেন না যেমন  তেমনি এগুলো পাওয়ার সুযোগও অনেক কম।

চার. শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ গ্রামে বাস করে এই গ্রামাঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমন্বয়হীনতা ও আন্তরিকতার ঘাটতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রমে উদাসীনতা, শ্রেণিশিক্ষা উপকরণের অভাব ইত্যাদি এই ভাষা শিখন ও শেখানো কার্যক্রমকে নিশ্চয়ই বাধাগ্রস্ত করছে।

পাঁচ. শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শেখার প্রতি পরম্পরায় অহেতুক অদ্ভুত ভীতি (English Phobia) ও 'আগেই পারিবনা' প্রবণতা অনেকাংশেই এই ভাষা অর্জনে বড় প্রতিবন্ধকতা। এছাড়াও আছে অনুপ্রেরণা, আত্মবিশ্বাস ও নিয়মতান্ত্রিক চর্চার অভাব।

পরিশেষে,  বিশ্বজ্ঞানলাভের জন্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিনিময়ের হাতিয়ার হলো ইংরেজি ভাষা। বাঙালিদের ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে উপনিবেশবাদ বিরোধী মনোভাব হতে বের হতে হবে। বাংলা যেমনি মননে মগজে ধারণ করেছি তেমনি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ইংরেজি ভাষাকে স্থান করে দিতে হবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে। কেননা ইংরেজি এখন নিত্য খাদ্য গ্রহণের  মতো প্রয়োজন। জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কথা জানতে গেলে যে ভাষার মাধ্যমে জানতে বা শিখতে হবে সেটা হলো ইংরেজি ভাষা। সুতরাং বিশ্বের বুকে অস্তিত্বের জানান দিতে হলেও ইংরেজি ভাষা জানার প্রয়োজন তা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ আর নেই। সুতরাং সব প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে শিক্ষার্থীদেরকে ইংরেজিতে কথা শোনা, বলা,  পড়া ও লেখা এই চারটি দক্ষতায় সমানভাবে নিয়মিত নিয়মতান্ত্রিক অনুশীলন করার প্রত্যয়ে পথ চলতে হবে। তাহলেই আমরা বিশ্বমানের নাগরিক হতে পারব। তাছাড়া উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ছুটে গিয়ে উন্নত জ্ঞান গরিমায় হতে পারব সমৃদ্ধ।

লেখক: প্রভাষক - ইংরেজি, শশীদল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু তাহের কলেজ, কুমিল্লা

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ - dainik shiksha পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম - dainik shiksha ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে - dainik shiksha আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে - dainik shiksha ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি - dainik shiksha কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024490356445312