ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাই এবং আইএলটিএস পরীক্ষা

মাছুম বিল্লাহ |

ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পরীক্ষার নাম IELTS যার পূর্ণরূপ হচেছ International English Language Testing System. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পড়াশুনা বা কাজ করার জন্য ইংরেজি ভাষার ওপর কার কতটা দক্ষতা আছে তা প্রমাণ করা প্রয়োজন। এ  জন্যই এই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একটি স্কোর অর্জন করতে হয়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ আরও অনেক দেশে পড়াশুনা ও কাজের জন্য যেতে চাইলে ওঊখঞঝ-এর স্কোরের প্রয়োজন হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রায়  তিন হাজার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ  IELTS -এর স্কোর গ্রহন করে। কানাডার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেও IELTSএর স্কোর প্রয়োজন হয়। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য বয়সের কোন বাধ্যবাধকতা নেই, নির্দিষ্ট কোন শিক্ষাগত যোগ্যতারও প্রয়োজন হয়না। আমাদের দেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল এই পরীক্ষা পরিচালনাকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান। IELTS  পরীক্ষা দেয়া যায় Academic ও General Training মডিউলে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা Academic মডিউলে পরীক্ষা দিতে পারবেন।যদি কোন শিক্ষার্থী কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে ভর্তি হতে চান, তবে তাঁকে General Training মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়। এ ছাড়া যারা ইমিগ্রেশনের জন্য যেতে চান, তাদেরও এবহবৎধষ ঞৎধরহরহম মডিউলে মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়। দুই ধরনের মডিউলেই  চারটি অংশ থাকে--- লিসেনিং (Listening),রিডিং (Reading),রাইটিং (Writing) ও স্পিকিং(Speaking).

লিসেনিং (Listening)----এই অংশের উদ্দেশ্য হচেছ পরীক্ষার্থীর কথোপকথন শুনে সে কতটা বুঝতে পারে তা যাছাই করা। তাই কোন বিষয়ে কথোপকথন বা বক্তৃতা রেকর্ড বাজিয়ে শোনানো হয়। উল্লেখ্য এই রেকর্ড মাত্র একবারই বাজানো হয়। কাজেই অত্যন্ত মনোযোগের সাথে শুনতে হয়। এ অংশের জন্য সময় ৩০ মিনিট। এই ৩০ মিনিটে চারটি অংশে পরীক্ষা দিতে হয়, প্রশ্ন থাকে ৪০ টি।অর্থাৎ একটি প্রশ্নে সময় এক মিনিটেরও কম। এই পরীক্ষায় চারটি অংশ থাকে। প্রথম দুটি অংশে যথাক্রমে জনগনের আগ্রহের  বিষয় সংশ্লিষ্ট সংলাপ এবং বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ অংশে দুইবা ততোধিক ব্যক্তির শিক্ষা কিংবা প্রশিক্ষণ বিষয়ক আলোচনা প্রার্থীকে একবার শোনানো হয়। প্রশ্ন পড়ে উত্তরপত্রে লেখার জন্য ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। প্রশ্নগুলোর ধরণ সাধারনত  এমসিকিউ, ছোট প্রশ্নে বক্তার বক্তব্য প্রশ্নের উত্তর লেখা, শুন্যস্থান পূরন , মিলকরণ, একটি শব্দের সাথে অন্য শব্দ মিলিয়ে পুর্ণাঙ্গ একটি অর্থ দাড় করানো, চার্ট পূরণ করা । শূন্যস্থানের ক্ষেত্রে বানান খুবই গুরুত্বপূর্ন, কারণ ভুল বানানে কোন নম্বর দেয়া হয়না। প্রথম সেকশন বেশ সহজ হয় এবং ধীরে ধীরে কঠিন হতে থাকে। প্রশ্ন পড়ার জন্য পরীক্ষার্থীকে সময় দেয়া হয়, অতএব এই সময়টুকু কাজে লাগানো উচিত। লিসেনিং হয় মূলত চল্লিশ মিনিট, যার মধ্যে প্রথম ৩০ মিনিটে কম্পিউটারে চালানো ভয়েস রেকর্ডার শুনতে শুনতে  প্রশ্নপত্রে উত্তর লেখা যায়। শেষ দশ মিনিট সেই উত্তরগুলো মূল উত্তরপত্রে লেখার জন্য। যেহেতু কোন নেগেটিভ মার্কিং নেই, কোন প্রশ্নের উত্তর  না পারলেও আন্দাজ করে একটি উত্তর লিখে আসা উচিত। লিসেনিংএর প্রস্তুতির জন্য সবচেয়ে সহজ হচেছ ইংরেজি ভিডিও দেখা আর ক্যামব্রিজের ---বইগুলো থেকে অনুসরণ করা। 

লিসেনিংয়ের পরই রিডিং অংশ শুরু হয়। রিডিং অংশে তিনটি বিভাগে ৪০টি প্রশ্ন থাকে। সময় এক ঘন্টা।সাধারনত বই, সংাবদপত্র, জার্নাল বা ম্যাগাজিন থেকে কিছু অংশ তুলে দেয়া হয়।সেখান থেকে সংক্ষিপ্ত উত্তর খুজে বের করা,  ও বাক্যপুরণ করা  ধরনের প্রশ্ন থাকে। রিডিংয়ে একজন পরিক্ষার্থীকে মাঝারি আকারের প্যাসেজ থেকে প্রশ্ন করা হয়। মোট ৬০ মিনিটের রিডিংয়ের জন্য, অর্থাৎ প্রতিটি প্যাসেজের জন্য বিশ মিনিট করে সময় পাওয়া যায়। ইংরেজি পড়ার অভ্যাস না থাকার কারণে অনেকেই রিডিংয়ে সব প্রশ্নের উত্তর করতে পারেননা, ফলে স্কোর কমে যায়। সময় থাকলে হয়তো অনেকেই আরও প্রশ্নের উত্তর করতে পারতেন। অতএব  IELTS এর রিডিং অংশে ভাল করার জন্য পড়ার অভ্যাস, বিশেষ করে ইংরেজিতে পড়ার অভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ন । পড়ার অভ্যাস বাড়ানোর জন্য ইংরেজি বই পড়ার বিকল্প নেই। আপনি গল্পের বই পড়া পছন্দ করলে সেটি দিয়েই শুরু করুন। প্রথম দিকে কঠিন মনে হলেও পরে দেখবেন বেশ সহজ লাগছে। আপনাকে শুধু কষ্ট করে শুরুটা করতে হবে। তাহলে আপনি নিজেই পাথ্যর্কটি বুঝতে পারবেন। গল্পের বই ভালো না লাগলে যে ধরনের বই ভালো লাগে সেগুলো পড়–ন। এর বাইরে ক্যামব্রিজের বই থেকে অবশ্যই অনুশীলন করতে হবে। রিডিংয়ের ক্ষেত্রে হেডিং ম্যাচ বেশ কঠিন মনে হয়। এ ধরনের প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্যাসেজের ৭-৮টি প্যারার প্রতিটির সারমর্ম কিংবা প্রতিটি প্যারার জন্য একটি হেডিং দিতে হয়। আর মোট অপশন থাকে যতটি দরকার তার থেকে ২-৩টি বেশি এবং বেশ কাছাকছি। খুব মনোযোগ দিয়ে না পড়লে  এ ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আয়েল্টস পরীক্ষার এই অংশে পরীক্ষার্থীদের এক ঘন্টা সময় দেয়া হয়। যেখানে ৪০টি প্রশ্ন তিনটি বিভাগে সজ্জিত থাকে। একজন পরীক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট সময়ের সমধ্যে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। 

স্পিকিং অংশে মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা হয়। প্রথম অংশে পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারন প্রশ্ন করা হয়। যেমন নিজের পড়াশুনা, কাজ, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদি সংক্রান্ত। দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দুই মিনিট কথা বলতে হয়। তৃতীয় অংশে চার থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য পরীক্ষকের সাথে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে কথোপকথন চালাতে হয়।

রাইটিং অংশেও স্পিকিংয়ের মতো চারটি ভাগে মার্কিং হয়। এ অংশে পরীক্ষার্থীদের লেখার দক্ষতা যাচাই করা হয় এবং  সময় বরাদ্দ থাকে এক ঘন্টা। একাডেমিক বিভাগেও পরীক্ষার্থীদের ডায়াগ্রাম দেখে নিজের কথায় উত্তর লিখতে হয়। আর জেনারেল বিভাগেও পরীক্ষার্থীদের  সুনির্দিষ্ট  বিষয়ে নিবন্ধ লিখতে হয়। কাজেই পরীক্ষার আগেই ঠিক করে নিতে হয় কোন মডিউলটি একজন পরীক্ষার্থীর জন্য প্রযোজ্য হবে। প্রথমত আপনাকে যে ব্যাপারে লিখতে বলা হয়েছে সে ব্যাপারেই লিখেছেন কিনা তা দেখা হয়আপনাকে যদি কোন বিষয়ের ভালো ও খারাপ উভয় দিক দিয়ে লিখতে বলা হয় তাহলে দুটিই লিখতে হবে। একটি অনেক সুন্দর লিখে অন্যটি বাদ গেলে কিন্তু মার্ক অনেক কমে যাবে। সুতরাং কি লিখতে বলা হয়েছে সেটি মাথায় রেখে লিখতে হবে। লেখায় অবশ্যই ফর্মাল টোন বজায় রাখতে হবে।  সেই সঙ্গে রাইটিংয়ে মার্কিং কিসের ভিত্তিতে হয় সেটি মাথায় রাখতে হবে। শুধু লেখার ধরনের কারণে অনেকে কম নম্বর  পেয়ে থাকেন। এরপর থাকছে ভোকবুলারী। একই শব্দ বারবার ব্যবহার করলে যিনি পড়বেন তার বিরক্তি লাগাটাই স্বাভাবিক। 

স্কোরিং- ১ থেকে ৯এর স্কেলে  IELTS- চারটি অংশে আলাদাভাবে প্রাপ্ত স্কোর যোগ করে গড় হিসেব করে চূড়ান্ত স্কোর দেয়া হয়। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে সাধারনত সাড়ে ছয় থেকে সাত পেতে হয়। সাড়ে ছয় এর কম খুব কম বিশ্ববিদ্যায়ে নেয়।  ওঊখঞঝ  পরীক্ষায় পাস বা ফেল করার কোন বিষয় নেই। প্রয়োজনীয় স্কোর করতে পারলেই পরীক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্য সফল হয়। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে সাধারনত ৬.৫ থেকে ৭.৫ পেতে হয়। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় পৃথকভাবে (Writing, Speaking, Listening, Reading)  এ ভালো করতে হয়। সম্পূর্ন স্কোর যত ভালোই হোক না কেন, একটি বিভাগে স্কোর কমে গেলে ভর্তির সুযোগ নাও পাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত প্রস্তুতি নিয়ে যথেষ্ট ভাল স্কোর করা সম্ভব। তবে, হুট করে ভাল স্কোর করা সম্ভব নাও হতে পারে। ইংরেজিতে যথেষ্ট দক্ষ হলেই যে কোন প্রস্তুতি ছাড়া পরীক্ষা দিয়ে আশানুরূপ ফল নাও হতে পারে। মোটামুটি তিনমাস হাতে সময় রেখে প্রস্তুতি নেয়া ভাল। আমাদের দেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং আইডিপির আয়োজনে IELTS পরীক্ষা দেয়া যায় প্রতিমাসে সাধারনত তিনবার পরীক্ষা নেয়া হয়, আর পরীক্ষা দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট ফি ছাড়াও  পাসপোর্ট ও দুই কপি পাসপোর্ট আকারের রঙিন ছবির প্রয়োজন হয়।তবে, এটি নির্ভর করে একজন পরীক্ষার্থীর অর্জিত ইংরেজির দক্ষতার ওপর। আয়েল্টস পরীক্ষার স্কোরের মেয়াদ থাকে দুই বছর। অর্থাৎ দুই বছরের মধ্যে কোথাও ভর্তি না হলে বা কাজে যোগদান না করলে, পুনরায় ভর্তি বা কাজের জন্য আবারও IELTS পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হয়। 

লেখক : মাছুম বিল্লাহ, সাবেক শিক্ষক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0099477767944336