দৈনিক শিক্ষাডটকম, গাজীপুর: গাজীপুরের কাপাসিয়ায় কপালেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ফুল না দেওয়ায় ওই স্কুলের শিক্ষককে মারধর করে আহত করার অভিযোগ উঠেছে স্কুলের এক অভিভাবক সদস্য ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
গতকাল শনিবার গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উপজেলার কপালেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আহত ওই শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক (৪৪)। তিনি কপালেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। মোজাম্মেল হক ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি। অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য বিল্লাল হোসেন (৪২)। এ ঘটনায় মোজাম্মেল হক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে বিল্লাল হোসেন ছাড়াও মো. সাইফুল ইসলাম (৪৫), সোহেল রানা সাহেল (৪২), মো. হাবিবুর রহমান (৪৪) ও নাসির উদ্দিনও (৪১) জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে বিদ্যালয়ের কার্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা চলছিল। সেখানে পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও এ কে এম লুৎফর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইউএনওকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে বলেছিলেন অভিভাবক সদস্য বিল্লাল হোসেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক সেখানে ফুলের ব্যবস্থা করা যায়নি। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান বিল্লাল হোসেন। একপর্যায়ে বিল্লাল হোসেন ওই প্রধান শিক্ষকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ শুরু করেন।
এ সময় শিক্ষক মোজাম্মেল হক বিল্লাল হোসেনকে থামতে বলেন। এতে তাঁর প্রতিও ক্ষিপ্ত হন বিল্লাল। তিনি উত্তেজিত হয়ে আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মোজাম্মেল হককে মারধর করেন। এতে আহত হলে মোজাম্মেল উদ্ধার করে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপস্থিত ইউএনও থানায় খবর পাঠান। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
তবে বিল্লাল হোসেন শিক্ষক মোজাম্মেল হককে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি মারধর করিনি। ইউএনওকে ফুল দিতে বলেছিলাম। প্রধান শিক্ষক ফুলের ব্যবস্থা করেননি। আমি এর প্রতিবাদ করায় শিক্ষক মোজাম্মেল হক আমাকে মা-বাবা তুলে গালিগালাজ শুরু করেন। এতে আমি তাঁর হাতে শুধু ধাক্কা দিয়েছি। মারধরের বিষয়টি অতিরঞ্জিত।’
এ প্রসঙ্গে কাপাসিয়ার ইউএনও এ কে এম লুৎফর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে নয়, তাঁদের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে তাঁরা তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে শিক্ষককে মারধর করা হয়। আমি পুলিশ ডেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন মারধরের শিকার শিক্ষক। এখন আইনগতভাবে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেবে।’
কপালেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসাইন বলেন, ইউএনওকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর ব্যবস্থা করতে না পারায় বিল্লাল হোসেন তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এতে বাধা দেওয়ায় বিল্লাল হোসেন তাঁর লোকজন নিয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হককে মারধর করেছেন।
কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবু বকর মিয়া বলেন, ‘একটি অভিযোগ পেয়েছি। ওই অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে।’