ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া |

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শিক্ষকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। 

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লাশ নিয়ে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত বিক্ষোভ করে তারা। 

শিক্ষক মো. এরফানুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

নিহত শিক্ষকের নাম মো. এরফানুল ইসলাম শরীফ। তিনি উপজেলার হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

পরিবারের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মানসিক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে ওই শিক্ষক মারা গেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগসহ নানা বিষয় নিয়ে ইউএনও ওই শিক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।

বিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ইউএনও গাজালা পারভীন রুহী বিদ্যালয়ে গিয়ে অফিসকক্ষে এরফানুল ইসলাম শরীফের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। এ সময় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শনে চলে যান। বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষ থেকে অন্য শিক্ষকদেরও বের করে দেওয়া হয়। ১৫-২০ মিনিট কথা বলার পর ইউএনও বিদ্যালয় থেকে চলে যান। তখন একাধিক শিক্ষককে নিয়ে ওই কক্ষেই নাশতা করেন এরফানুল হক। ইউএনওর সঙ্গে তেমন কিছুই হয়নি বলে তিনি অন্য শিক্ষকদের কাছে বিষয়টি এড়িয়ে যান। কিছুক্ষণই পর সেখানেই অসুস্থ হয়ে লুটিয়ে পড়েন এরফানুল হক। পরে তাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা হাসপাতালে ছুটে যায়। লাশ নিয়ে তারা মিছিল করে উপজেলা পরিষদে যায়। সেখানে ইউএনওর বিরুদ্ধে শিক্ষককে মানসিক নির্যাতনের দাবি করা হয়। এসময় উপজেলা পরিষদে অবস্থানরত সেনা সদস্যরা বিক্ষুব্ধদের শান্ত করেন।

শিক্ষক এরফানুল ইসলাম শরীফের ভাই মো. আওলাদ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ইউএনও এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাদের রাধানগরের বাড়িতে যান। এ সময় উপজেলা কমপ্লেক্সের দিকে কেন বাড়ির গেট রাখা হলো, সেটা নিয়ে ইউএনও প্রশ্ন তোলেন ও ক্ষোভ দেখান। কিছুক্ষণ পরই তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে উচ্চবাচ্যে কথা বলেন এবং মানসিক নির্যাতন করেন বলে জানতে পারেন। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে গেলে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ইউএনওর মানসিক নির্যাতনের কারণে শিক্ষক এরফানুল ইসলাম মারা যান বলে তিনি অভিযোগ করেন।

শাহপীর কল্লা শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক দেওয়ান সাজিদুল হক অভিযোগ করেন, এরফানুল ইসলাম শরীফ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়েছিলেন। কিন্তু সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও আখাউড়ার সাবেক মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল তাকে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসতে দেননি। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ইউএনও বিদ্যালয়ে গিয়ে এরফানুল ইসলামকে মানসিক নির্যাতন করেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও গাজালা পারভীন রুহী। তিনি বলেন, আমি তার আটকে থাকা বেতন হওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তাহলে কেন আমি তাকে মানসিক নির্যাতন করতে যাব?

তিনি আরও বলেন, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের কোয়ার্টার ভবনগুলো পরিদর্শনের অংশ হিসেবে এরফানুল ইসলামের বাড়ির দিকে যেতে হয়। আর বিদ্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে স্বাভাবিক কথা বলি। তার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের উচ্চবাচ্য হয়নি। আমি আসার অনেক পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানতে পেরেছি।

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই শিক্ষক এরফানুল ইসলাম শরীফ মারা যান।

আখাউড়া থানা তদন্ত অফিসার মো. মাসুদ বলেন, খবর পেয়ে আমরা হাসপাতাল যায়। শিক্ষক এরফানুলের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058250427246094