ইবনে সিনার মৃ*ত্যুবার্ষিকী আজ

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

ইসলামি স্বর্ণযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, চিন্তক, লেখক ইবনে সিনার মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তাকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক গণ্য করা হয়। ইবনে সিনা ছিলেন গ্রিক অ্যারিস্টটলীয় দর্শন দ্বারা প্রভাবিত একজন পেরিপেটিক দার্শনিক। ধারণা করা হয় যে তিনি ৪৫০টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যার মধ্যে ১৫০টি দর্শনশাস্ত্র বিষয়ক এবং ৪০টি চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক রচনাসহ মোট ২৪০টি গ্রন্থ বর্তমানে টিকে রয়েছে।

দর্শন এবং চিকিৎসাশাস্ত্র ছাড়াও ইবনে সিনার রচনা সংকলনে জ্যোতির্বিজ্ঞান, আলকেমি, ভূগোল এবং ভূতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, ইসলামি ধর্মতত্ত্ব, যুক্তিবিদ্যা, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং কবিতা বিষয়ক লেখাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইউরোপে তিনি আভিসেনা নামে সমধিক পরিচিত; হিব্রু ভাষায় তার নাম Aven Sina। আরবিতে তার পুরো নাম আবু আলী হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ হাসান ইবনে আলী ইবনে সিনা।

ইবনে সিনা বুখারার (বর্তমান উজবেকিস্তান) অন্তর্গত খার্মাতায়েন জেলার আফসানা নামক স্থানে ৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে (মতান্তরে, আগস্ট মাস) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম সিতারা। তার মাতৃভাষা ছিলো ফার্সি। ফার্সি ভাষায় তিনি বেশ কিছু কবিতা ও গ্রন্থ রচনা করেন। তবে সমকালীন অন্যান্যদের মতো তিনিও আরবি ভাষাকে জ্ঞান প্রকাশের মূল বাহন হিসেবে গ্রহণ করেন। ইবন সিনার পিতা বুখারার সামানীয় সম্রাটের অধীনে একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন।

জন্মের পর ইবনে সিনা সপরিবারে আফসানাতে বাস করছিলেন। তার দ্বিতীয় ভাইয়ের জন্মের পর আবদুল্লাহ ও সিতারা সবাইকে নিয়ে বুখারায় চলে আসেন এবং তাদের শিক্ষার জন্য যথোপযুক্ত গৃহশিক্ষক নিয়োগ করেন। এখান থেকেই সিনার শিক্ষার সূচনা ঘটে। সব ভাইয়ের মধ্যে সিনা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই বিশেষ মেধার স্বাক্ষর রাখেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে সমগ্র কুরআন মুখস্থ করেন। মুখস্থের পাশাপাশি তিনি সকল সূক্ষ্ম ও জটিল বিষয় নিয়ে ছোটবেলা থেকে চিন্তা করতেন। এতে তার বাবা-মা ও শিক্ষক সকলেই বিস্মিত হতেন। বাবা ইবনে সিনাকে ইসমাইলী শাস্ত্র বিষয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন।

আগে থেকেই আবদুল্লাহ সেখানকার এক মেওয়া বিক্রতার কথা জানতেন। এই বিক্রেতা ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী ছিল। বাবা আবদুল্লাহ সিনাকে এই মেওয়া বিক্রতার কাছে গণিত শেখার ব্যবস্থা করে দেন। মেওয়া বিক্রেতা এর আগে কাউকে তার জ্ঞান বিতরণের সুযোগ পায় নি। এই সুযোগে সে সিনাকে সানন্দে শিক্ষা দিতে থাকে এবং সিনার মেধা এতে আরো সহযোগীর ভূমিকা পালন করে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতীয় গণিতের অনেক বিষয় তার আয়ত্তে এসে যায়। এরপর তাকে অধ্যয়ন করতে হয় ইসমাইলী শাস্ত্রের আইন অধ্যায়। এতেও তিনি দক্ষতা অর্জন করেন। এর মাঝে আর একজন যোগ্য শিক্ষকের সন্ধান পান সিনার পিতা। তিনি ছিলেন তৎকালীন অন্যতম জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব আল নাতেলী। নিজ পুত্রকে শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি নাতেলীকে নিজের গৃহে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এই শিক্ষকের কাছে সিনা ফিকহ, আইনশাস্ত্র, জ্যামিতি এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র শিক্ষা করেন।

ইবন সিনা অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তার অভিজ্ঞতার ঝুলিও ছিলো সমৃদ্ধ। তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ নগরী খোয়ারিজমে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি পণ্ডিত আল বেরুনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আল বেরুনির মূল উৎসাহ ছিলো ভারতবর্ষ। কিন্তু ইবন সিনা কখনও ভারত অভিমুখে আসেননি। তিনি যাত্রা করেছিলেন পশ্চিম দিকে। তার মূল উৎসাহও ছিলো পশ্চিমের দিকে। এ কারণেই হয়তো তার চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত বইগুলো প্রাচ্যের সীমানা ছাড়িয়ে পাশ্চাত্য জগতেও আপন অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলো।

ইবনে সিনা তার সমসাময়িক কবি ফেরদৌসীর জন্মস্থান বিখ্যাত তুস নগরী পরিদর্শন করেছিলেন। এখান থেকে তিনি ইরানের সুপ্রাচীন শহর হামাদানে গমন করেন। ঐশ্বর্যশালী এবং ঐতিহাসিক এই নগরীটিকে ভালো লেগে গিয়েছিল সিনার। এখানে অনেকদিন ছিলেন। দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। বয়সও হয়েছিল অনেক। তাই তিনি মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি খুঁজছিলেন। হামাদানে তিনি এই প্রশান্তি খুঁজে পান। এখানে তিনি ধীরস্থির মনে চিন্তা করার সময় সুযোগ লাভ করেন। হামাদানের সম্রাট তার থাকাখাওয়া ও নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ইবনে সিনা ১০৩৭ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003777027130127