ইবিতে ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প, দুই বছর মেয়াদ বাড়লেও কাজ ৫২ শতাংশ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ইবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ইবি : অবকাঠামো নির্মাণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জুন মাসে ৫৩৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার বরাদ্দ পায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। চার বছর মেয়াদি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন (৩য় পর্যায়)- ১ম সংশোধিত’ এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর। সে সময় করোনা পরিস্থিতি, প্রশাসনে রদবদল, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির অজুহাতে কাজ বন্ধ রাখা প্রভৃতি কারণে ৪৮ মাসে সব মিলিয়ে কাজ শেষ হয়েছিল মাত্র ৩২ শতাংশ। পরবর্তীতে দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ৫২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৯ মাসে অবশিষ্ট ৪৮ শতাংশ কাজ শেষ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। সেক্ষেত্রে পুনরায় মেয়াদ বর্ধিত করতে হতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের অধীনে ৯টি ১০ তলা ভবন নির্মাণ, ১১টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ মোট ২০টি আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন নির্মাণ ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ রয়েছে। ১০ তলা ৯টি ভবনের পাঁচটি আবাসিক হল, দুটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার এবং একটি করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। এর মধ্যে আটটি ভবনের নির্মাণকাজ শেষে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনটি ভবন আগামী জুনের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। তবে ৯টি ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। যার ৪১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে, গত বছরের নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে একটি বেনামি পত্র আসে। ঐ পত্রে দাবি করা হয়, মেগা প্রকল্পের আওতাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম বিলে ৬ কোটি টাকার অধিক ভুয়া বিল তুলেছেন ঠিকাদার। এছাড়া পত্রে সহযোগী হিসেবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট       

একাধিক কর্মকর্তাসহ ছাত্রলীগের সাবেক বর্তমান সাত নেতার নাম উল্লেখ করা হয়।

সে সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বিষয়টি তদন্তে শিক্ষক সমিতির তত্কালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেনকে আহ্বায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দারকে সদস্য করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তিন মাস পর গত ৯ মার্চ উপাচার্যের কাছে তিন পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির সদস্যরা।

পরবর্তীতে বিষয়টি তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের তথ্য চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠি পাঠায় দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দুদকের কার্যালয় থেকে কিছু তথ্য চেয়ে চিঠি এসেছিল। যা যা চেয়েছিল সব তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছি।

এ বিষয়ে উপাচার্য কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, আমরা সকল কিছু পর্যবেক্ষণ করেই রিপোর্ট তৈরি করে প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। দুদকের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, দুদক আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি কি না। এ বিষয়ে দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, মাত্রই তদন্ত শুরু করেছি এখন বলার মতো কিছু নেই।

প্রকল্প পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নওয়াব আলী খান বলেন, প্রজেক্ট নিয়ে আমাদের কোনো অসন্তুষ্টি নেই। আমরা আন্তরিকতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কাজের গুণমান নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট হলেও গতি নিয়ে সন্তুষ্ট না। ধীর গতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমোদন পর্যায়ে সাত মাস বিলম্ব, করোনা, সংস্থা প্রধানের পরিবর্তন, ড্রয়িং ডিজাইনে বিলম্ব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রভৃতি কারণে কাজে ধীরগতি দেখা দেয়।

বেনামি পত্রের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ৬ কোটি টাকা তো দূরে থাক এখানে ৬ টাকা অনিয়মের সুযোগ নাই। ঠিকাদার ৪৭% শতাংশ কাজ করেছে। তাকে ৪৪ শতাংশ কাজের বিল প্রদান করা হয়েছে। কোনো অতিরিক্ত টাকা প্রদান করা হয়নি। দুদকের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, অফিসিয়ালি কিছু জানি না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী কে এম শরীফ উদ্দীন বলেন, বর্তমানে যে কাজগুলো চলমান সেগুলোর টেন্ডার হয়েছে দেরিতে। এছাড়া করোনা এবং বৈশ্বিক বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে দিয়েও কাজ চালিয়ে নিতে হয়েছে। তাই আমরা কিছুটা পিছিয়ে গেছি। বেনামি পত্রের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো বিভ্রান্তিকর। বিল প্রদানের প্রক্রিয়া হচ্ছে ঠিকাদার আবেদন করে, সেখানে যাচাই-বাছাই করে বিল প্রদান করা হয়। এখানে অনিয়মের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমরা আগাচ্ছি। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে কোনো আপস করিনি। এখন পর্যন্ত যতটুকু কাজ হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আগামী জুনের মধ্যে আরো বেশকিছু কাজ সম্পন্ন হবে। তবে আমার ধারণা ছেলে ও মেয়েদের হলগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের পরে সময় বাড়াতে হতে পারে।

বেনামি পত্রের অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, অভিযোগটি যেহেতু দুর্নীতির, তাই আমি সঙ্গে সঙ্গেই তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তারা রিপোর্ট প্রদান করেছে। রিপোর্ট সিন্ডিকেট মিটিংয়ে তুলব। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002877950668335