ইসিবি-বাউনিয়া সড়ক অবহেলিত কেনো

মাজহার মান্নান |

যেকোনো স্থানে যাতায়াতের জন্য একটি সুন্দর প্রশস্ত সড়কের প্রয়োজন হয়। কোনো স্থানের উন্নয়নের প্রধান পূর্ব শর্ত হলো সুন্দর ও প্রশস্ত সড়ক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে আমরা রাজধানী উন্নয়নের হিরিক লক্ষ্য করছি। কিন্তু রাস্তার কোনো খবর নেই। ৬-৮ ফুট রাস্তার পাশে ১০-১২ তলা ভবন গড়ে উঠছে। দেখার যেনো কেউ নেই। যতোদূর চোখ যায় শুধু আকাশচুম্বী অট্টালিকা। অট্টালিকার ভিড়ে যেনো দমটাও স্বস্তিতে নেয়ার সুযোগ নেই। উন্নয়নের উম্মাদনা যেনো সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যৌথভাবে জমি কিনে ভবন নির্মাণের মহা উৎসব চলছে। যারা ল্যান্ড ও ভবন নির্মাণ ব্যবসা করেন তারা খুব দ্রুত প্রচুর টাকার মালিক বনে যান। আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তারা। ভবন নির্মাণের এক অদম্য প্রতিযোগিতা চলছে, কী উদ্দেশ্য তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।

ব্যাংকগুলোও এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য অস্থির হয়ে থাকে। ঢাকায় যারা বাস করেন প্রত্যেকের একটাই লক্ষ্য একটি ফ্লাট নির্মাণ করা। যাদের আর্থিক সচ্ছলতা আছে তারা একাধিক ফ্ল্যাট কেনার জন্য উদগ্রীব। গভীর খাদ, বিল, হাওড় কোনো কিছুর কোনো বালাই নেই। ভবন তৈরি করাই যেনো একমাত্র কাজ। আমার জানা মতে এমন বেশ কয়েকজন আছেন যারা আবেগে ফ্ল্যাট কিনেছেন অথচ রাস্তা নেই, থাকলেও কাদা-পানি ভরপুর। তারা নিজ ফ্ল্যাটে উঠতে পারছেন না সড়ক না থাকায়। ভাড়াও মিলছে না। তবুও ফ্ল্যাট কিনেই যেতে হবে। যারা ফ্ল্যাট তৈরি করে বিক্রি করেন তাদের প্রচুর লাভ হয়। এই টাকার নেশা তাদের আরো আগ্রাসী করে তোলে। প্রায় ২৫ বছর আমি ইসিবি-বাউনিয়া এলাকায় বসবাস করছি। কী সুন্দর নিরিবিলি একটি এলাকা ছিলো। দারুণ উপভোগ করতাম। 

কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আজ এই এলাকাটি একটি ইট পাথরের স্তুপে পরিণত হয়েছে। প্রচুর জলাশয় ছিলো এই এলাকায়। সেগুলোর প্রায় সবই গিলে ফেলা হয়েছে। যেটুকু আছে সেটারও ভরাট করে ভবন নির্মাণ চলছে। গত কয়েক বছরে কয়েক লক্ষ মানুষ এই এলাকায় বসবাস শুরু করেছে। গিজগিজ করে মানুষ। ইসিবি-বাউনিয়া সড়কটি যেনো পুরান ঢাকার সড়কের মতো রুপ নিচ্ছে। প্রচুর জ্যামে স্তব্ধ থাকে পুরো পরিবেশ। গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার চিন্তা করতেই গা শিউরে ওঠে। প্রচণ্ড জনাকীর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে এলাকাটি। মিরপুর-কালশী-ইসিবি-মাটিকাটা- বিমানবন্দর সড়কটি চালু হবার পর রাতারাতি বদলে গেছে এই এলাকার চিত্র। ইসিবি চত্বর ঢাকার একটি চরম ব্যস্ততম এলাকা। ইসিবি থেকে মানিকদি বাজার-বালুঘাট বাজার-বাউনিয়া হয়ে বিমানবন্দরের পাশ ঘেসে সরু সড়কটি উত্তরা জসিমউদ্দীনে মিলিত হয়েছে। সড়কটি সরু হলেও এর রয়েছে প্রচণ্ড চাপ। কেনোনা এই এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য একটাই সড়ক। অন্য কোনো সংযোগ সড়ক নেই। এখানে সমস্যা একাধিক। সরু সড়কটির দুপাশ দিয়ে অপরিকল্পিত দোকানপাট, বাজার আর ভবন তৈরি হয়েছে। ইসিবি থেকে বালুঘাট বাজার পর্যন্ত সড়কটির বেশ করুণ অবস্থা। দুপাশ থেকে শত শত দোকান আর ঘরবাড়ি সড়কটিকে চেপে ধরে রেখেছে। রাস্তার দুপাশে গিজগিজ করছে দোকানপাট। এর মধ্য দিয়েই চলছে বড় বড় ট্রাক। এই অঞ্চলে প্রচুর নির্মাণ কাজ চলছে। আর নির্মাণসামগ্রী আনার জন্য দিনরাত চলে বড় বড় ট্রাক ও মালবাহী লরি। গাড়ির চাপে দিশেহারা পথিক। এটাতো গেলো প্রতিদিনের জ্বালা। এ ছাড়াও কিছু বিষয় আছে যেটা আরো বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি নিয়ত চলে খোঁড়াখুঁড়ি।  

এ যেনো এক জগাখিচুরি অবস্থা। ইসিবি-বাউনিয়া সড়কটির একপাশে ঢাকা সেনানিবাসের দেয়াল অবস্থিত। ইসিবি থেকে শুরু করে বাউনিয়া কালিবাড়ি পর্যন্ত এই দেয়ালটি বিস্তৃত। সড়কের অন্য পাশে যতোটুকু জায়গা ফাঁকা আছে সেখানেও দোকানপাট গড়ে তোলার হিড়িক চলছে। ইসিবি-বাউনিয়া সড়কটিতে দুটি প্রাইভেটকার পাশাপাশি চলতে কষ্ট হয়। সেখানে বহবিধ যানবাহনের চলাচল লক্ষ্য করি। শত শত ব্যাটারিচালিত অটো চলে এই অঞ্চলে। মোড়গুলোতে অটো চালকদের বিশৃঙ্খল দৌরাত্ব্যে জনগণ যেনো দিশেহারা। এই সড়কটি মহাব্যস্ত হওয়ার আরো তিনটি বড় কারণ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিএএফ শাহীন কলেজ কুর্মিটোলা (প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী) আদর্শ বিদ্যানিকেতন, বালুঘাট স্কুল। এই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা এবং তাদের অভিভাবকেরা চলাচল করে এই সড়কে। দুপুরে স্কুলগুলো যখন ছুটি হয় তখন বালুঘাট বাজার এলাকা জ্যামে স্থবির থাকে। ঘণ্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়।

ইসিবি-বাউনিয়া সড়কটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়া সত্বেও এটি চরম অবহেলার শিকার। গত ২৩ বছর ধরে শুনছি সড়কটি প্রশস্ত হবে। কিন্তু কোনো বাস্তবায়ন নেই। একবার শুনি ৬০ ফুট চওড়া হবে, একবার শুনি ১০০ ফুট হবে। তবে কোনোটিরই কোনো নির্ভর্যোগ্য তথ্য নেই। তবে একটি বেসরকারি টিভিতে ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য এ কে আরাফাতের বক্তব্য থেকে জানতে পারি সড়কটিকে ৬০ ফুট চওড়া করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, ২৪-এর নির্বাচনের পর তিনি এটার প্রতি আরো নজর দিবেন। তার কথার প্রতি আমরা আস্থাশীল। তিনি শুধু এমপি নন, প্রতিমন্ত্রীও হয়েছেন। তাই তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। কোনো জটিলতায় সড়কটি সম্প্রসারণের কাজ আটকে আছে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। জনগণ সড়কটির সম্প্রসারণ চায় অতি দ্রুত। কেনোনা প্রতি নিয়ত এই সড়কটিতে দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। 

সড়কের বিভিন্ন স্থানে ময়লা আবর্জনার স্তুপ করে রাখা হয়। সরু সড়কটিতে যত্রতত্র রিকশা, ভ্যান, গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। যেভাবে এই এলাকার মানুষ বাড়ছে তাতে সড়কটির যদি সম্প্রসারণ না করা হয় তবে অচিরেই যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। বর্তমান সরকারের একটি বিশেষ নজর রয়েছে বিভিন্ন সড়কগুলোর সরস্কার,  সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা। সরকারের বিশেষ নজরটি যেনো আমাদের ওপর পড়ে সেটাই চাওয়া। সড়কটির দুপাশে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছে। পরবর্তীকালে এগুলো ভেঙে সড়ক সম্প্রসারণ করা কঠিন হবে। তাই এখনই সড়কটি সম্প্রসারণের কাজে হাত দেয়া দরকার। তাই ইসিবি-মানিকদি-বালুঘাট-বাউনিয়া- জসিমউদ্দীন পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কটির যতো দ্রুত সম্ভব সম্প্রসারণ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

লেখক: কবি ও কলামিস্ট 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023400783538818