ইহারা কি শিক্ষক নাকি নিপীড়ক, প্রশ্ন দৈনিক সমকাল-এর

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দৈনিক সমকাল পত্রিকার আজ ১১ অক্টোবরে সম্পাদকীয়র শিরোনাম ‘ইহারা কি শিক্ষক নাকি নিপীড়ক?’  লেখাটা হুবহু তুলে ধরা হলো : 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই ২০১১ সালে একটি নিষেধাজ্ঞামূলক পরিপত্র জারি করিলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি বন্ধ হয় নাই। ‘সামান্য প্রহার’ না করিলে শিক্ষার্থী ‘মানুষ’ হইবে না, এইরূপ ধারণাসম্পন্ন শিক্ষক এমনকি অভিভাবকের সংখ্যাও কম নহে। কিন্তু রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে যাহা ঘটিয়াছে, উহা নিছক অজ্ঞতা ও অদক্ষতা নহে। বিদ্যালয়টির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান নাহিয়ানকে যেইভাবে দিবসের পর দিবস ধরিয়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হইয়াছে, উহা ফৌজদারি অপরাধ ব্যতীত কিছুই হইতে পারে না।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থী পিটিয়ে বরখাস্ত হলেন উইলসের শিক্ষক নাসির উদ্দিন

মঙ্গলবার দৈনিক সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে শিক্ষার্থী নির্যাতনের রোমহর্ষক চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে। পিতার সহিত বিরোধের জের ধরিয়া আলোচ্য শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নপত্র দেওয়ার পূর্বেই ১০ নম্বর কাটিয়া লওয়া, কারণ ছাড়াই ক্লাসে দাঁড় করাইয়া রাখা, মধ্যাহ্ন বিরতিকালে খেলিতে বা খাইতে ক্যান্টিনে যাইতে এমনকি শৌচাগার ব্যবহারেও বাধা দিবার যেই চিত্র তদন্তে উঠিয়া আসিয়াছে, উহাতে সংশ্লিষ্টদের অমানবিকতা ও মানসিক বিকৃতি স্পষ্ট। এই প্রশ্ন তোলা অত্যুক্তি হইবে না যে, ইহারা শিক্ষক, না সন্ত্রাসী? নবম শ্রেণিতে শীর্ষস্থান অধিকারী শিক্ষার্থীর বার্ষিক পরীক্ষায় আট বিষয়ে অকৃতকার্য হইবার দায় ইহারা এড়াইতে পারেন না। এই সকল অস্বাভাবিক চাপে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হইয়া আলোচ্য শিক্ষার্থী কেবল বিদ্যালয়বিমুখই হয় নাই; একাধিক চিকিৎসকের অধীনে মানসিক চিকিৎসাও লইতে হইতেছে। ঐ শিক্ষার্থীর জীবন ও শিক্ষাজীবনের এহেন পরিণতির জন্য অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, সাত শিক্ষক ও দুই নিরাপত্তাকর্মীর উপযুক্ত শাস্তি হইতেই হইবে।

বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করিয়া প্রজ্ঞাপিত পরিপত্রটি যথাযথ প্রতিপালিত হইতেছে কিনা, উহারও নজরদারি ও মূল্যায়ন বাড়াইতে হইবে।

রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে নামি বিদ্যালয়ে যখন এমন পরিস্থিতি, তখন প্রত্যন্ত এলাকায় কী ঘটিতে পারে, উহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। শাস্তির পরিবর্তে কীভাবে ইতিবাচক তৎপরতায় শিশুদের ‘মানুষ’ করা যাইতে পারে, সেই সম্পর্কে মা-বাবা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচি লওয়া জরুরি। শুধু বিদ্যালয় নহে; গৃহ, ক্রীড়াস্থল, যানবাহন, কর্মক্ষেত্র, পরিচর্যাকেন্দ্রসহ সর্বক্ষেত্রে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করিয়া একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নও সময়ের দাবি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055859088897705