ঈদে বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে বক্সবন্দি রনি!

ঢাবি প্রতিনিধি |

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ঈদে বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মাথা বক্সবন্দি করে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থীর মহিউদ্দিন রনি।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে নিজের মাথাকে বক্স বন্দি করে সারা শরীরে সাদা-কালো-ধূসরে আবৃত এবং দু’পায়ে সাদা ও কালো পৃথক জুতা পরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের এ শিক্ষার্থী।

মহিউদ্দিন রনি বলেন, রমজানের শুরুতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছি। আপনারা হয়ত

জানেন সরকার একটি আইন করে দিয়েছে যে যারা অতিরিক্ত পণ্য মজুদ করে রাখবে তাদের ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে। তারপরও আড়তদার ব্যবসায়ীরা তাদের মত করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। জনসাধারণ তাদের কাছে বন্দি। এবং রমজান জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। যতটুক করছি তার বিপদ-আপদ আমার পরিবারের উপর দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমাকে চুপ থাকতে বলা হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কারো ওপর অভিযোগ তুলতে পারছি না। তবে আমাকে চুপ থাকতে বলা হচ্ছে। যেহেতু আমাকে ক্যামেরার সামনে চুপ থাকতে বলা হচ্ছে, তাই আমি চুপ থাকছি। তবে আমার কথাগুলো যেন অন্য মানুষ বলে সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

বাস ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাস মালিকরা নিশ্চয় গরিব না তাদের চলাফেরার সামর্থ্য আছে। কিন্তু একজন নিম্ন আয়ের মানুষটি সেটি নেই, তারা এ ঈদে বাড়ি যাবে কি করে? বাংলাদেশের মানুষের আয়ের থেকে ব্যয় বেশি। দেশে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করে এবং যেসব সরকারি দপ্তর রয়েছে তারা যেন বাসেরও যে সিন্ডিকেট হয়েছে তারা যেন তা নিয়ন্ত্রণ করে। যে বাস মালিক যারা রয়েছে তারা যেন বাসের ভাড়া কমিয়ে অভয় দেয়, এটি আমার দাবি।

এমন পোশাকে প্রতিবাদ জানানো প্রসঙ্গে ঢাবির এ শিক্ষার্থী বলেন, এটি একটি পারফর্মিং আর্ট। বক্সবন্দি যে আমার মাথা এটি দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যারা আমাদেরকে শেখাচ্ছে থিঙ্ক আউট অফ দ্য বক্স। কিন্তু যারা বলছে তারা তাদের মাথা বক্সের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে। এই চিত্রটি তাদের চিত্র! এবং আমার যে পুরো শরীর ছড়িটি দেখছেন এগুলোর সাধারণ মানুষের প্রতিবিম্ব। 

মহিউদ্দিন রনি বলেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দুটি সত্ত্বা রয়েছে। একটি আলো আরেকটা অন্ধকার। আমরা প্রত্যেকেই সেই সঙ্গে ভালো এবং মন্দের দিকটি বহন করে থাকি। মাঝখানে দেখবেন এটি ধূসর রঙ যেটি গোধূলি। যেখানে দিনের আলো এবং রাতের অন্ধকার মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, এখানে একটি নিউট্রাল জায়গা তৈরি হয়, এটি হলো আপনার বিবেক। মাঝ বরাবর জায়গায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি অন্ধকারের পক্ষ নেবেন নাকি আলোর পক্ষ নেবেন। এখানে এটিই বোঝানোর চেষ্টা করেছি। 

‘থিঙ্ক আউট অফ দ্য বক্স’ প্রসঙ্গে রনি বলেন, আমি প্রত্যেককে আহ্বান জানাব চিন্তাভাবনাগুলো বক্সের মধ্যে কুক্ষিগত করবেন না। আপনারা বক্সের বাইরে চিন্তাভাবনা করবেন তাহলে হয়তো কোনো না কোনোভাবে এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারব।

ঢাবির থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের এ শিক্ষার্থী বলেন, আমি ভাইরাল হতে চাই না! সেজন্য আমি আমার মুখটিকে ঢেকে নিয়েছি। বাক্সের মধ্যে আমি আমার মুখে বন্ধ করে রেখেছি, আপনারা আমার বক্সকে ভাইরাল করুন। আমার লেখাটিকে ভাইরাল করুন আমার অনুভূতিটিকে ভাইরাল করুন। 

তিনি আরো বলেন, ঈদে আমি বাড়ি যাবো না। আমার মনে হচ্ছে যতক্ষণ আমি এখানে থাকবো প্রশাসন সজাগ থাকবে।

এসময় তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বিএসটিআই, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্থানীয় প্রশাসনসহ ভোক্তা ও যাত্রীদের অধিকার রক্ষায় নিয়জিত রাষ্ট্রের সকল দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সাধারণ জনগণের পক্ষে রনির ২ দফা দাবি হলো, ঈদে অতিরিক্ত ও অন্যায্যভাবে বাস ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে এবং কর্পোরেট মজুতদারদের সঠিক তদারকি ও আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তার করা সেই প্রতিবাদে দেশের মানুষও সমর্থন দেয়। এর আগে গেল বছরের এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার আধুনিকায়ণসহ ৬ দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় আসেন এ শিক্ষার্থী। ঢাবি ক্যাম্পাসে পরিচিতি মুখ হয়ে ওঠেন রনি। এছাড়া কিছুদিন আগে থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি চা বিক্রি শুরু করেছিলেন এ শিক্ষার্থী।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046780109405518