ঈদে খুশির মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় ঈদের সালামি। আর সালামি দেয়া হয় সাধারণত একেবারে নতুন, কড়কড়ে কচকচে নতুন টাকায়। এ ছাড়া বকশিশ, দান-খয়রাত কিংবা ফিতরাতেও অনেকে নতুন টাকা বিতরণ করেন। গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে প্রতি বছরের মতো এবারো ঈদের আগে বাজারে নতুন টাকার নোট ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রোববার থেকে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের ৩২টি ব্যাংকের ৪০টি শাখার মাধ্যমে নতুন টাকার বিনিময় শুরু হয়েছে। এ বছর মোট ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সমপরিমাণ টাকার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন টাকা দিচ্ছে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে।
রোববার থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৭ই এপ্রিল পর্যন্ত (সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত) ৩২টি ব্যাংকের ৪০টি শাখার মাধ্যমে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন গ্রাহকরা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন বিল্ডিংয়ের নিচ তলা থেকেও নতুন টাকার নোট নিতে পারছেন গ্রাহকরা। কোনো ব্যক্তি যেন একাধিকবার নতুন টাকা নিতে না পারেন এজন্য এনআইডি কার্ড দিয়ে টাকা নিতে হচ্ছে। এখান থেকেও একজন সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫০০ টাকা নিতে পারছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন অফিসের মাধ্যমে চার ধরনের নতুন নোট (৫, ১০, ২০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানের নোট) বিশেষ ব্যবস্থায় বিনিময় করা হবে। একই ব্যক্তি একাধিকবার নতুন নোট গ্রহণ করতে পারবেন না। তবে নোট উত্তোলনকালে কেউ ইচ্ছা করলে কাউন্টার থেকে মূল্যমান নির্বিশেষে যেকোনো পরিমাণ ধাতব মুদ্রা গ্রহণ করতে পারবেন।
সোমবার রাজধানীর গুলিস্তান ও মতিঝিল সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে অস্থায়ী টাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন অঙ্কের নতুন নোটের পসরা নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। আর ক্রেতারা দরদাম করে নতুন টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।
গুলিস্তানে নতুন টাকা কিনতে এসেছেন খাইরুল। তিনি বলেন, অন্য বছরের মতো এবারো টাকা কিনতে এসেছি। ব্যাংকগুলোতে নতুন টাকার যে লাইন, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন আর সময় ব্যয় হয়। এজন্য খোলাবাজার থেকেই নতুন টাকা কিনে আসছি প্রতিবার। তবে এবার টাকার প্রতিটি বান্ডিলেই ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি চাওয়া হচ্ছে।
আরেক ক্রেতা বলেন, এর আগের বছর নতুন দুই টাকার নোট কিনেছিলাম ১৭০ টাকা দিয়ে, এবার ২২০ টাকা চাচ্ছে। দাম বেড়েছে ৫, ১০, ২০ টাকাসহ সব নোটের।
গুলিস্তান থেকে দুই টাকার এক বান্ডিল টাকা কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে ২২০ টাকা, পাঁচ টাকার বান্ডিলে ১৮০-২০০ টাকা। আর ১০ টাকার প্রতি বান্ডিলের জন্য অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ১৮০ টাকা, ২০ টাকা টাকার বান্ডিলে ১৭০-১৮০ টাকা, ৫০ টাকার বান্ডিল ১৬০-১৭০ টাকা, ১০০ টাকার বান্ডিলে ১৫০ টাকা এবং ২০০ টাকার বান্ডিলের জন্য অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা পর্যন্ত।
তবে ক্রেতাদের এসব কথা অস্বীকার করেন গুলিস্তানের নতুন টাকার ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, এবার ক্রেতা আগের মতো নেই। আর দাম আগের মতোই আছে, বাড়েনি।
এদিকে তুলনামূলক দাম কম রয়েছে মতিঝিল সেনা কল্যাণ ভবনের সামনে অস্থায়ী নতুন টাকার বাজার। এ বাজারে পাঁচ টাকার বান্ডিলে অতিরিক্ত ১৬০-১৭০ টাকা, ১০ টাকার প্রতি বান্ডিল টাকার জন্য অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা, ২০ টাকার বান্ডিলে ১৫০-১৬০ টাকা, ৫০ টাকার বান্ডিলে ১৫০ টাকা, ১০০ টাকার বান্ডিলে ১৩০-১৪০ টাকা এবং ২০০ টাকার বান্ডিলের জন্য অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা পর্যন্ত।
মতিঝিলে নতুন টাকা বিক্রেতা নাইম বলেন, টাকা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি বেশি হওয়ায় অনেকেই দাম বেশি চাচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা দাম জানেন, তাই বেশি নেয়ার সুযোগ নেই এখানে।